খেলা

স্থগিত হলো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর

দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ১৫তম আসর ফের একবার স্থগিত করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানায়, আসরটি আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই দেখা দিয়েছিল অনিশ্চয়তা

চলতি বছরের জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসেবে আর মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও আয়োজক দেশ, ভেন্যু কিংবা ম্যাচসূচি কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি ঘিরে ধীরে ধীরে সন্দেহ বাড়ছিল ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ফুটবল ফেডারেশন থেকেও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসছিল না। শেষ পর্যন্ত সাফ কর্তৃপক্ষ নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, ২০২৫ সালে আর টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। ২০২৬ সালে নতুন করে আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

সাফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ২০২৫ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ স্থগিত করা হয়েছে। ফুটবলের উত্তরণে আরও সমন্বিত আয়োজন নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালে বিশ্বকাপ বছরের মধ্যে একটি উপযুক্ত সময়ে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হবে।’

২০২৬ সালের কোন সময় অনুষ্ঠিত হবে, এখনও অনিশ্চিত

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৬ সালের নির্দিষ্ট সময়, ভেন্যু এবং স্বাগতিক দেশ সম্পর্কে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে যেহেতু ২০২৬ সাল বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হওয়ার বছর, তাই আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে সমন্বয় করে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময় নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন। অনেকেই ধারণা করছেন, বিশ্বকাপের আগে কোনো প্রস্তুতিমূলক সময়কে বেছে নেওয়া হতে পারে, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলো নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আন্তর্জাতিক মানে প্রস্তুতি নিতে পারবে।

টানা স্থগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুটবলার ও ফুটবল সংস্কৃতি

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ কেবল একটি টুর্নামেন্ট নয়, বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের প্রাণ। এই টুর্নামেন্ট থেকেই অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রেখেছেন। গত বছর ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ১৪তম আসরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল শ্লথ, তবে পাকিস্তান ও নেপালের মতো দেশগুলো কিছুটা উন্নত পারফরম্যান্স দেখায়। এমন একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়মিত না হলে আঞ্চলিক ফুটবলের উন্নয়নে বড় ধাক্কা লাগে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) এক কর্মকর্তা বলেন, “এমন একটি প্রতিযোগিতা স্থগিত হওয়া মানে দেশের খেলোয়াড়দের একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ হারিয়ে ফেলা। দীর্ঘ সময় খেলোয়াড়রা এমন টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নেয়। খেলোয়াড়দের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে, এবং ফুটবল সংস্কৃতিতে একধরনের স্থবিরতা দেখা দেবে।”

পূর্বের আসরগুলোর সাফল্য ও বর্তমান বাস্তবতা

১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এখন পর্যন্ত ১৪টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে ভারত জয়ী হয়েছে সর্বোচ্চ ৯ বার। মালদ্বীপ দুইবার শিরোপা জিতেছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০০৩ সালে ঢাকায় আয়োজিত আসরে শিরোপা জেতে।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আফগানিস্তান এখন আর সাফের সদস্য নয়। অন্যদিকে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের ফুটবল উন্নতির দিকে এগোচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নিয়মিত টুর্নামেন্ট না হলে উন্নয়নের গতি ব্যাহত হবে।

আন্তর্জাতিক ফুটবল সূচির সঙ্গে সমন্বয়ই বড় চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যালেন্ডার ভীষণভাবে ব্যস্ত। বিশ্বকাপ, এশিয়ান কাপ, ক্লাব টুর্নামেন্ট এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচের কারণে আলাদা সময় বের করা কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতাগুলো প্রায়শই দ্বিতীয় প্রাধান্য পায়। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপও এই বাস্তবতার শিকার। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখনও ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় বড় দলগুলো এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে আগ্রহ হারায়, যা আয়োজনকে আরও কঠিন করে তোলে।

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা: পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের সুযোগ

২০২৬ সাল পর্যন্ত টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়া একদিকে হতাশাজনক হলেও অন্যদিকে এটি একটি পুনর্গঠনের সুযোগও হতে পারে। সাফ ফেডারেশন যদি এই সময়ের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়, নতুন ভেন্যু ও সম্প্রচার সুবিধা নিয়ে চিন্তা করে এবং স্পনসরশিপ বাড়ানোর চেষ্টা করে, তবে আগামী আসরগুলো আরও আকর্ষণীয় ও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাফ যদি নিয়মিতভাবে প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারে, তবে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে গতি ফিরবে। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের ফুটবলারেরা আত্মপ্রকাশের সুযোগ পাবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button