
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। আগামী ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে শুরু হতে যাওয়া এই টেস্টকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অভিজ্ঞ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়ের দলে প্রত্যাবর্তন। প্রায় আড়াই বছর পর সাদা পোশাকে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান বিজয়ের
সর্বশেষ ২০২২ সালে জাতীয় দলের টেস্ট দলে ছিলেন এনামুল হক বিজয়। এরপর দীর্ঘ সময় তাকে জাতীয় দলে দেখা যায়নি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করে নির্বাচকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। সর্বশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল)-এ বেশ কয়েকটি বড় ইনিংস খেলেন বিজয়। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫১তম প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি, যা প্রমাণ করে এখনও তিনি কতটা ধারাবাহিক ও ফর্মে রয়েছেন।
বিজয়ের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে নির্বাচক প্যানেলের এক সদস্য বলেন, “বিজয়ের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আমাদের নজরে ছিল। উইকেটের পেছনে তার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা, দুটোই আমাদের টেস্ট দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে সিলেট টেস্টে আমাদের টপ অর্ডারে যে ধস নেমেছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে বিজয়ের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার কাজে আসতে পারে।”
সিলেট টেস্টে হতাশাজনক হার, স্কোয়াডে পরিবর্তন
প্রথম টেস্টে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেটে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। একসময় মনে হয়েছিল বাংলাদেশ হয়তো ম্যাচটি জিতে নেবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোলারদের ব্যর্থতায় হারতে হয়েছে স্বাগতিক দলকে। এই পরাজয়ের পর স্কোয়াডে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তরুণ পেসার নাহিদ রানার জায়গায় জায়গা পেয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম।
সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের পেসাররা একদমই ছন্দে ছিলেন না। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তানভীরকে স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে, যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো করছেন। চট্টগ্রামের স্পিন সহায়ক উইকেট বিবেচনায় তানভীরের অন্তর্ভুক্তিকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
ঘোষিত স্কোয়াড ও সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে আছেন বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। দলে ফিরেছেন এনামুল হক বিজয়, আছেন মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, এবং তাইজুল ইসলামদের মতো অভিজ্ঞরা। অধিনায়ক হিসেবে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং সহ-অধিনায়ক হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশ স্কোয়াড:
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ (সহ-অধিনায়ক), এনামুল হক বিজয়, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, জাকির আলী, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, তানভীর ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও তানজিম হাসান সাকিব।
সম্ভাব্য একাদশে কিছু চমক থাকতে পারে। বিজয়কে হয়তো ওপেনিংয়ে সুযোগ দেওয়া হতে পারে মাহমুদুল হাসান জয় বা সাদমান ইসলামের পরিবর্তে। আর মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হককে ব্যাটিং অর্ডারের মাঝখানে দেখা যেতে পারে।
চট্টগ্রামে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধা
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সাধারণত স্পিন সহায়ক পিচ হিসেবে পরিচিত। অতীতেও দেখা গেছে, এই উইকেটে স্পিনাররা ভালো করে থাকেন। তাই এবারের টেস্টেও স্পিনারদের ওপর বড় দায়িত্ব থাকবে। বিশেষ করে তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধে থাকবে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব।
নির্বাচকদের মতে, তানভীর ইসলামের অন্তর্ভুক্তি চট্টগ্রামের কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে তিনি ভিন্নধর্মী আক্রমণ আনতে পারেন এবং এটি জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের বিপক্ষে কার্যকর হতে পারে।
জিম্বাবুয়ের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত
প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর জিম্বাবুয়ে দল। তাদের স্পিনার এবং মিডল অর্ডার ব্যাটারদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। দ্বিতীয় টেস্টেও তারা একই পারফরম্যান্স বজায় রাখতে চায়।
বিশেষ করে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ও অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলে থাকেন। প্রথম টেস্টেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাই চট্টগ্রাম টেস্টেও তারা বাংলাদেশ দলের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেন।
সিরিজে সমতা না হার, প্রশ্ন বাংলাদেশের সামনে
প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় টেস্ট এখন বাংলাদেশের জন্য “কর বা মর” পরিস্থিতির মতো। যদি তারা এই ম্যাচেও হেরে যায়, তবে হোম সিরিজ হারতে হবে, যা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সে কারণেই নির্বাচকরা একদিকে যেমন অভিজ্ঞদের দলে ফিরিয়েছেন, তেমনি তরুণদেরও সুযোগ দিচ্ছেন।
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটিই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নতুন করে দলে জায়গা পাওয়া বিজয়ের পারফরম্যান্সও থাকবে আলোচনার কেন্দ্রে। যদি তিনি অভিজ্ঞতার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন, তবে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা ফিরে আসবে তার ওপর।