
প্রতীক্ষার অবসান হলো। বাংলাদেশের মেয়েরা সর্বশেষ দল হিসেবে জায়গা করে নিল ২০২৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। বুক ধুকপুক করা এক দিন শেষে ভারতের টিকিট ‘কনফার্ম’ হলো বাংলাদেশ নারী দলের।
পাকিস্তানের কাছে আজ শেষ ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপ ভাগ্যটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ছেড়ে দিয়েছিল নিগার সুলতানার দল। বাংলাদেশের পাঁচ ঘণ্টা পর থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘অন্যায়’ এক সুবিধাও পেয়ে গিয়েছিল। টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে নেট রান রেট মেলানোর সুযোগ নিতে তাই দুবার ভাবেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
থাইল্যান্ড ১৬৬ রানে অলআউট হতেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা জেনে যান কী করলে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে যাবেন তাঁরা। কাজটা কঠিনই ছিল। ১৬৭ রানের লক্ষ্য ছুঁতে হতো ১০ ওভারে। স্কোর সমান হয়ে যাওয়ার পর ছক্কা মারলে ১১ ওভারে জিতলেই চলত। ক্যারিবীয়রা সেই কাজ প্রায় করেই ফেলেছিলেন।
বাংলাদেশের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের বুকের ধুকপুকানি অবিশ্বাস্য মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ব্যাটার হেইলি ম্যাথুস। সঙ্গীদের নিয়ে যা শুরু করেছিলেন, আর কয়েকটা বল বেশি টিকলেই ক্যারিবীয় ওপেনার নিশ্চিত বাংলাদেশের স্বপ্ন চুরমার করে দিতেন। ম্যাথুস মেয়েদের ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দেন কি না, এ নিয়ে যখন গবেষণা শুরু হলো, তখনই ছন্দপতন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের নবম ওভারে ফারিহা ইসলাম ত্রিসার বলে ক্যাচ তুলে দেন ম্যাথুস। ৯.২ ওভারে ১৫৮ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঝোড়ো ইনিংস। শ্বাসরুদ্ধকর এক অপেক্ষার পর নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা।
দিনের শুরুতে পাকিস্তানের কাছে ৭৭ রানে হেরে যাওয়াটা খুব হতাশাজনক ছিল বাংলাদেশের জন্য। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬৫ রান তোলে। জবাবে রুমানা আহমেদ ছাড়া আর কোনো ব্যাটার দাঁড়াতে না পারায় ৪০.৩ ওভারে ১৮৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। রুমানা একাই করেন ৬৩ রান।
এই হারের পর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাগ্য ঝুলে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ-থাইল্যান্ড ম্যাচের ওপর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে সমীকরণ ছিল, থাইল্যান্ডকে অল্প রানে অলআউট করে দ্রুততম সময়ে সেই রান তাড়া করতে পারলে তারা নেট রান রেটে বাংলাদেশকে টপকে যাবে।
থাইল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৩ ওভারে ১৬৬ রান করে অলআউট হয়ে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়। ১৬৭ রানের লক্ষ্য তারা ১০ ওভারের মধ্যে তাড়া করতে পারলে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো নেট রান রেট তাদের হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার হেইলি ম্যাথুস ও রাশাদা উইলিয়ামস শুরু থেকেই ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে তারা ৯৩ রান তুলে ফেলেন। ম্যাথুস মাত্র ৩৩ বলে স্পর্শ করেন হাফসেঞ্চুরি। এরপর আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তিনি। মাত্র ৪৪ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি, যা মেয়েদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম।
তখন মনে হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহজেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেবে। কিন্তু নবম ওভারে ফারিহা ত্রিসা ম্যাথুসকে আউট করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। ম্যাথুস আউট হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতি কমে যায়। শেষ পর্যন্ত ৯.২ ওভারে ১৫৮ রানে থামে তাদের ইনিংস।
এই ফলাফলের পর বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ উভয়েরই পয়েন্ট এবং জয় সংখ্যা সমান থাকে। তবে নেট রান রেটে সামান্য এগিয়ে থাকায় বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
এই কঠিন পথ পেরিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশের ক্রীড়াপ্রেমী জনতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে অভিনন্দনের ঝড়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই সাফল্য নিঃসন্দেহে নারী ক্রিকেটের জন্য একটি বড় অর্জন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নারী ক্রিকেটের উন্নয়নে আরও বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং নতুন প্রজন্মকে এই খেলাধুলায় উৎসাহিত করবে বলে আশা করা যায়। নিগার সুলতানার নেতৃত্বাধীন দলটি বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করবে, এমন প্রত্যাশা এখন সবার।
এই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হাসি মুখে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অপেক্ষা করছেন বিশ্বকাপে মেয়েদের ঝলমলে পারফরম্যান্স দেখার জন্য।