
চীনের একটি বহুতল ভবনের ১১ তলা থেকে পড়ে মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের জাতীয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার অ্যারন বুপেন্দজা মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর। গ্যাবনের ফুটবল ফেডারেশন (ফেগাফুট) তাদের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শোকবার্তার মাধ্যমে এই হৃদয়বিদারক সংবাদটি নিশ্চিত করেছে।
ফেগাফুট তাদের বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছে যে বুপেন্দজাকে একজন অসাধারণ স্ট্রাইকার হিসেবে স্মরণ করা হবে, যিনি ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত আফ্রিকান কাপ অফ নেশনস (আফকন)-এর সময় তার উজ্জ্বল ক্রীড়াশৈলীর মাধ্যমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ফেডারেশন এবং গ্যাবনের সমগ্র ফুটবল পরিবার এই কঠিন সময়ে বুপেন্দজার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
গ্যাবনের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জেনারেল ব্রাইস ক্লোটেয়ার ওলিগুই এনগুয়েমাও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বুপেন্দজাকে ‘একজন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সেন্টার ফরোয়ার্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যিনি তার খেলার মাধ্যমে গ্যাবনিজ ফুটবলের জন্য সম্মান বয়ে এনেছিলেন। রাষ্ট্রপতি তার শোকবার্তায় বুপেন্দজার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন এবং এই অপূরণীয় ক্ষতিতে সমগ্র জাতি তাদের পাশে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) ছেড়ে অ্যারন বুপেন্দজা চীনের পেশাদার ফুটবল লিগে যোগদান করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চাইনিজ ক্লাব জিজিয়াং এফসির হয়ে মাঠ মাতাচ্ছিলেন। ক্লাবটিও তাদের ওয়েবসাইটে এক শোক বিবৃতি প্রকাশ করে এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অকাল প্রয়াণে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। জিজিয়াং এফসির পক্ষ থেকে বুপেন্দজার পেশাদারিত্ব ও মাঠের পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।
অ্যারন বুপেন্দজার ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল তার নিজের দেশ গ্যাবনের ক্লাব সিএফ মোনানার হয়ে। এরপর তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্লাবে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ফ্রান্স, পর্তুগাল, তুরস্কের মতো দেশের ক্লাবে খেলার পাশাপাশি তিনি কাতার ও সৌদি আরবের ক্লাবগুলোতেও সুনামের সাথে খেলেছেন। এমনকি, তিনি তুরস্কের শীর্ষ ফুটবল লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাবও অর্জন করেছিলেন, যা তার অসাধারণ গোল করার দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।
গ্যাবনের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বুপেন্দজা ৩৫টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ৮টি গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন। ২০২১ সালে ক্যামেরুনে অনুষ্ঠিত আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সেও (আফকন) তিনি তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। জাতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি দলের আক্রমণভাগে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন এবং দলের অনেক জয়ে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তার গতি, ড্রিবলিং ক্ষমতা এবং নিখুঁত ফিনিশিং তাকে দলের একজন অপরিহার্য খেলোয়াড়ে পরিণত করেছিল।
বুপেন্দজার আকস্মিক মৃত্যুতে গ্যাবনের ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার সতীর্থ খেলোয়াড়, কোচ এবং ফুটবলপ্রেমীরা এই অপ্রত্যাশিত খবরে গভীরভাবে মর্মাহত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বুপেন্দজার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন। গ্যাবনের ফুটবল ইতিহাসে বুপেন্দজার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার অভাব জাতীয় দল এবং ক্লাব ফুটবলে দীর্ঘকাল অনুভূত হবে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য স্থানীয় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে, এই মুহূর্তে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তদন্ত শেষ হওয়ার পরই কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে।
অ্যারন বুপেন্দজা ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার, যিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছিলেন। তার অকাল প্রয়াণ শুধু গ্যাবনের ফুটবলের জন্যই নয়, বিশ্ব ফুটবলের জন্যও একটি বড় ক্ষতি। তার প্রতিভা এবং মাঠের লড়াইয়ের স্পৃহা চিরকাল ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে অমলিন থাকবে।