খেলাক্রিকেট

আইসিসির মার্চ মাসের সেরার লড়াইয়ে যারা এগিয়ে

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) মার্চ মাসের ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ বা মাসসেরা ক্রিকেটার নির্বাচনের জন্য মনোনীত খেলোয়াড়দের নাম প্রকাশ করেছে। এই মাসের সেরা হওয়ার দৌড়ে পুরুষ বিভাগে তিনজন আন্তর্জাতিক তারকা জায়গা করে নিয়েছেন—নিউজিল্যান্ডের জ্যাকব ডাফি ও রাচিন রবীন্দ্র এবং ভারতের শ্রেয়াস আইয়ার। একইসঙ্গে নারীদের বিভাগেও মনোনয়ন পেয়েছেন তিনজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়।


ডাফির দুর্দান্ত উত্থান

নিউজিল্যান্ডের ডানহাতি পেসার জ্যাকব ডাফি মার্চ মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে ক্রিকেটবিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছেন। মাত্র তিন ম্যাচের সিরিজে তিনি শিকার করেন ১৩টি উইকেট। এই অসাধারণ কীর্তির মাধ্যমে ৩০ বছর বয়সী এই পেসার আইসিসি টি-টোয়েন্টি বোলারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান দখল করেন।

পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া ডাফির প্রতিটি স্পেল ছিল পরিকল্পিত ও কার্যকর। বিশেষ করে তার সুইং এবং নিখুঁত ইয়র্কার বলগুলো পাকিস্তানি ব্যাটারদের নাজেহাল করে তোলে। ডাফির এই পারফরম্যান্স শুধু ম্যাচজয়ী হিসেবেই বিবেচিত হয়নি, বরং তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নতুন এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সঙ্গত কারণেই তিনি মার্চ মাসের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার অন্যতম প্রার্থী।


শ্রেয়াসের ধারাবাহিক অবদান

ভারতের মধ্যক্রমের ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ার মার্চ মাসে দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নেতৃত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। তিনটি ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ৫৭ গড় এবং ৭৭ স্ট্রাইকরেটে সংগ্রহ করেন ১৭২ রান। ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়যাত্রায় তিনি ছিলেন দলের সেরা রান সংগ্রাহক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রেয়াসের ইনিংসগুলো ছিল পরিস্থিতির দাবি মেটানোর আদর্শ উদাহরণ। কঠিন সময়ে ক্রিজে নেমে ধৈর্যের সঙ্গে খেলে দলকে জয়ের পথ দেখান তিনি। বিশেষ করে ফাইনালে যখন ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে, তখন তার ৭৮ রানের ইনিংস দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেয়। তার আত্মবিশ্বাস, স্ট্রোকমেকিং এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার দক্ষতা তাকে মাসসেরা হওয়ার যোগ্যতা এনে দিয়েছে।


রাচিনের ম্যাচজয়ী শতক

নিউজিল্যান্ডের তরুণ অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র এ বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তার ব্যাটিং প্রতিভার পূর্ণ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে চাপের মুখে খেলেন দুর্দান্ত এক শতক। ১০৮ রানের ইনিংসটি ছিল নিঃসন্দেহে ম্যাচ নির্ধারক।

রাচিনের ব্যাটিং ছিল গতিশীল, পরিণত ও টেকসই। একদিকে যেমন তিনি বাউন্ডারিতে রান তুলেছেন, তেমনি অন্যদিকে উইকেটে থিতু থেকে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন। প্রতিপক্ষের স্পিন এবং পেস উভয়ের বিপক্ষেই তার স্ট্রোকপ্লে ছিল প্রশংসনীয়। ম্যাচ শেষে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কারও জিতেছিলেন এই তরুণ অলরাউন্ডার।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিউজিল্যান্ড হারলেও, দলের সাফল্যে রাচিনের অবদান অনস্বীকার্য। তরুণ এই ক্রিকেটার ইতোমধ্যেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।


মেয়েদের বিভাগেও তীব্র প্রতিযোগিতা

পুরুষদের পাশাপাশি নারী ক্রিকেটারদের মধ্য থেকেও আইসিসি বাছাই করেছে মার্চ মাসের সেরাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা। এই তালিকায় রয়েছেন তিনজন প্রতিভাবান নারী ক্রিকেটার—যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ পেসার চেতনা প্রসাদ, অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার আনাবেল সাদারল্যান্ড এবং ব্যাটার জর্জিয়া ভোল।

চেতনা প্রসাদ তার বোলিং দক্ষতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহিলা দলের পারফরম্যান্সে গতি এনেছেন। তরুণ হলেও তার নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থ এবং বৈচিত্র্যময় ডেলিভারি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বিপদে ফেলেছে।

অন্যদিকে, আনাবেল সাদারল্যান্ড এবং জর্জিয়া ভোল অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করেছেন। ব্যাট ও বল হাতে উভয়ই দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে জর্জিয়ার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং সাদারল্যান্ডের অলরাউন্ড দক্ষতা দলকে একাধিক ম্যাচে এগিয়ে রেখেছে।


আইসিসির মূল্যায়ন প্রক্রিয়া

প্রতি মাসে ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আইসিসি একটি বিচারক প্যানেল ও সমর্থকদের ভোটের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। বিচারক প্যানেলে থাকেন সাবেক খেলোয়াড়, কোচ, ধারাভাষ্যকার এবং আইসিসির নির্বাচিত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। তারা খেলোয়াড়দের মাসব্যাপী পারফরম্যান্স, ম্যাচের গুরুত্ব, প্রতিপক্ষের শক্তি ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নম্বর প্রদান করেন। এরপর অনলাইন ভোটিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সমর্থকরাও তাদের পছন্দের খেলোয়াড়কে ভোট দিতে পারেন।

এই সম্মাননা শুধুই একটি মাসিক পুরস্কার নয়, বরং এটি একজন খেলোয়াড়ের ধারাবাহিকতা, আত্মনিবেদন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।


উপসংহার

আইসিসির ‘মার্চ মাসের সেরা’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে বৈচিত্র্য এবং গভীরতা রয়েছে। কেউ বল হাতে, কেউ ব্যাট হাতে অথবা কেউ উভয় ক্ষেত্রেই অসাধারণ অবদান রেখেছেন। জ্যাকব ডাফির ধ্বংসাত্মক বোলিং, শ্রেয়াস আইয়ারের স্থিতধী ব্যাটিং এবং রাচিন রবীন্দ্রর ম্যাচজয়ী ইনিংস—তিনটি পারফরম্যান্সই আলাদা চরিত্রের, তবুও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

কে শেষমেশ ‘মার্চ মাসের সেরা’ খেতাব জিতবেন, সেটি নির্ধারণ করবে ভোট এবং বিচারকদের সমন্বিত মূল্যায়ন। তবে একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যে এই তিনজন ক্রিকেটার মার্চ মাসে বিশ্ব ক্রিকেটে আলাদা ছাপ রেখেছেন এবং তাদের কৃতিত্ব প্রশংসার দাবি রাখে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button