
পাঞ্জাব কিংসের মালিক প্রীতি জিনতা আনন্দে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। দলের অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার ডাগ আউটের জটলা থেকে বেরিয়ে এসে করতালি দিচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, ভারত টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, ‘কী দুর্দান্ত ব্যাটিং! চোখের শান্তি।’ এর আগেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন তাঁর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন।
আসলে প্রিয়াংশ আর্যের ব্যাটিংয়ের প্রেমে পড়ার কথা যে কারও। খেলা যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। পাঞ্জাব কিংসের এই ওপেনার আজ নেট দুনিয়া কাঁপানোর আগে মাঠ কাঁপিয়েছেন। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে মাত্র ৩৯ বলে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, যা বলের হিসেবে আইপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি।
তবে এই সেঞ্চুরি একটি বিশেষ দিক থেকে ইতিহাস গড়েছে। প্রিয়াংশ আর্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগেই দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেলেন। ৭টি চার ও ৯টি ছক্কার সাহায্যে ৪২ বলে ১০৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন এই তরুণ ওপেনার। তাঁর এই অসাধারণ ইনিংসের কাছে মহেন্দ্র সিং ধোনির ১২ বলে ২৭ রানের ঝোড়ো ইনিংসও ম্লান হয়ে যায়। ঘরের মাঠ মুল্লানপুরে পাঞ্জাব কিংস চেন্নাই সুপার কিংসকে ১৮ রানে পরাজিত করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাঞ্জাব কিংস: ২০ ওভারে ২১৯/৬ (আর্য ১০৩, শশাঙ্ক ৫২*, ইয়ানসেন ৩৪*; খলিল ২/৪৫, অশ্বিন ২/৪৮)।
চেন্নাই সুপার কিংস: ২০ ওভারে ২০১/৫ (কনওয়ে ৬৯, দুবে ৪২, রবীন্দ্র ৩৬, ধোনি ২৭; ফার্গুসন ২/৪০, ম্যাক্সওয়েল ১/১১)।
ফল: পাঞ্জাব কিংস ১৮ রানে জয়ী।
প্রিয়াংশ আর্যের এই বিস্ফোরক ইনিংসটি ছিল দেখার মতো। শুরু থেকেই তিনি চেন্নাইয়ের বোলারদের ওপর চড়াও হন। তাঁর প্রতিটি শটেই ছিল আত্মবিশ্বাস আর পেশাদারিত্বের ছাপ। পাওয়ার প্লে-তে তিনি যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল যেন কোনো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান খেলছেন। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনি খুব দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এরপর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এবং মাত্র ৩৯ বলে আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিগুলোর একটি করে ফেলেন।
তাঁর সেঞ্চুরির পর পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে উল্লাসের ঢেউ ওঠে। পাঞ্জাব কিংসের ডাগ আউটে থাকা খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফরাও দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান। দলের মালিক প্রীতি জিনতার উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সামাজিক মাধ্যমেও প্রিয়াংশ আর্যের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন বহু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও সমর্থক।
অন্যদিকে, চেন্নাই সুপার কিংসের বোলাররা এদিন প্রিয়াংশ আর্যের ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিনও তাঁর বোলিংয়ে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। খলিল আহমেদ দুটি উইকেট পেলেও তিনি ছিলেন বেশ খরুচে।
পাঞ্জাব কিংসের ইনিংসের শেষদিকে শশাঙ্ক সিং ৫২ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। এছাড়া ইয়ানসেন ৩৪ রান করে দলের স্কোর দুইশ রানের গণ্ডি পার করতে সাহায্য করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে চেন্নাই সুপার কিংসের শুরুটা ভালো হয়নি। তবে ডেভন কনওয়ে এবং শিভম দুবে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। কনওয়ে ৬৯ রান করেন এবং দুবে ৪২ রানের একটি ইনিংস খেলেন। রবীন্দ্র জাদেজা ৩৬ রান করলেও দলের জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
শেষদিকে মহেন্দ্র সিং ধোনি যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন জয়ের জন্য চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিল অনেকটা রান। ধোনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কিছু বড় শট খেলেন এবং মাত্র ১২ বলে ২৭ রান করেন। তবে তাঁর এই ঝড়ো ইনিংস শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে, দলকে জয় এনে দিতে পারেনি। পাঞ্জাবের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে চেন্নাইয়ের ব্যাটসম্যানরা শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় রান তুলতে ব্যর্থ হন। ফার্গুসন দুটি এবং ম্যাক্সওয়েল একটি উইকেট নেন।
এই জয়ের ফলে পাঞ্জাব কিংস পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করলো। অন্যদিকে, চেন্নাই সুপার কিংসকে এই পরাজয়ের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
প্রিয়াংশ আর্যের এই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি নিঃসন্দেহে এবারের আইপিএলের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচিত হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগেই এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখিয়ে তিনি ক্রিকেট বিশ্বের নজর কেড়েছেন। এখন দেখার অপেক্ষা, ভবিষ্যতে এই তরুণ ব্যাটসম্যান আরও কতদূর যান।