
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড জানিয়েছে, তাদের এটিএম, ডেবিট কার্ড, পয়েন্ট অব সেলস (POS), এসএমএস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। আগামী সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রাহকেরা এই সেবা ব্যবহার করতে পারবেন না।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও এটি একটি পরিকল্পিত কাজ, তবুও সাময়িক অসুবিধার জন্য ব্যাংকটি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
কেন বন্ধ থাকবে এই সেবা?
ব্যাংক খাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গ্রাহকেরা এখন নগদ অর্থ লেনদেনের চেয়ে বেশি ঝুঁকছেন এটিএম, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক লেনদেনের দিকে। কিন্তু প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, সিস্টেম নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য তত বেশি রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হচ্ছে।
ট্রাস্ট ব্যাংক জানিয়েছে—
- সফটওয়্যার আপডেট
- ডেটা সিকিউরিটি উন্নয়ন
- ট্রানজাকশন সিস্টেমের গতি বাড়ানো
- নতুন প্রযুক্তি সংযুক্তি
এসব কারণেই সাময়িকভাবে সব সেবা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
কোন কোন সেবা বন্ধ থাকবে?
১. এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন
২. ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা (POS)
৩. ইন্টারনেট ব্যাংকিং
৪. এসএমএস ব্যাংকিং
৫. ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইন লেনদেন
অর্থাৎ, এ সময়কালে ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রাহকেরা কার্ড-ভিত্তিক বা ডিজিটাল কোনো লেনদেন করতে পারবেন না।
বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে?
যারা ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রাহক, তাদের জন্য এটি অবশ্যই একটি বড় অসুবিধা। তবে ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- গ্রাহকেরা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ তুলতে পারেন।
- অনলাইন লেনদেনের জন্য অন্য ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করতে হবে।
- বড় কেনাকাটা বা ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য চেকের মাধ্যমে লেনদেন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে বার্তা
ট্রাস্ট ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে—
“অপরিহার্য কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণের কারণে আমাদের এটিএম, ডেবিট কার্ড, POS, এসএমএস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এতে গ্রাহকেরা কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়তে পারেন, এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। গ্রাহকরা যেকোনো তথ্যের জন্য আমাদের কল সেন্টার ১৬২০১-এ যোগাযোগ করতে পারবেন।”
গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
এ ধরনের ঘোষণায় সাধারণ গ্রাহকেরা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক গ্রাহক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে, এতো দিনব্যাপী সেবা বন্ধ থাকলে দৈনন্দিন লেনদেনে সমস্যা হবে। বিশেষ করে বেতন ভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন।
তবে অনেকেই আবার বলছেন, ব্যাংকের নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য যদি এটি অপরিহার্য হয়, তবে কয়েক দিনের অসুবিধা মেনে নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে এরকম ঘটনার ইতিহাস
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
- ২০২৩ সালে একাধিক ব্যাংক একযোগে সাইবার সিকিউরিটি হুমকি মোকাবেলায় সেবা সাময়িক বন্ধ রাখে।
- ২০২৪ সালে আরও কয়েকটি ব্যাংক তাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ আপডেট করতে গিয়ে একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর এই ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সিঙ্গাপুরে গ্রাহকদের আগেই জানিয়ে এ ধরনের সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
ট্রাস্ট ব্যাংক সম্পর্কে কিছু তথ্য
- প্রতিষ্ঠা: ১৯৯৯ সাল
- চেয়ারম্যান: সেনাবাহিনীর প্রধান (ট্রাস্ট ব্যাংক মূলত সেনা কল্যাণ সংস্থার মালিকানাধীন)
- সেবা: কর্পোরেট ব্যাংকিং, খুচরা ব্যাংকিং, SME, কৃষি ঋণ, রেমিট্যান্স
- ডিজিটাল সেবা: Trust Bank iBanking, মোবাইল অ্যাপ, এটিএম ও ডেবিট কার্ড
ব্যাংকটি বর্তমানে সারাদেশে ১২০টির বেশি শাখা পরিচালনা করছে এবং প্রায় ২৫০টির বেশি এটিএম বুথ রয়েছে।
বিশ্লেষণ: কেন এটি বড় খবর?
১. ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা লক্ষাধিক। তাদের বড় অংশ দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য কার্ড ও ডিজিটাল সেবার ওপর নির্ভরশীল।
২. প্রযুক্তিগত আপডেট মানেই গ্রাহক নিরাপত্তা ও সুবিধা বৃদ্ধি, তাই ভবিষ্যতে গ্রাহকের জন্য এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
৩. তবে ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের ঘোষণায় গ্রাহকের বিকল্প সমাধান স্পষ্টভাবে জানানো উচিত, যাতে গ্রাহকরা পরিকল্পনা করতে পারেন।
ট্রাস্ট ব্যাংকের সাময়িক এই সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের জন্য কিছুটা অসুবিধা তৈরি করলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কারণ ব্যাংকিং খাতে নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি আপডেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর গ্রাহকেরা স্বাভাবিকভাবে আবার সব সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।
গ্রাহকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে—
- আগে থেকেই প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ তুলে রাখা
- অন্য বিকল্প সেবা ব্যবহার করা
- প্রয়োজনে ব্যাংকের হেল্পলাইন (১৬২০১)-এ যোগাযোগ করা
এটি সাময়িক অসুবিধা হলেও ব্যাংকিং সেক্টরে গ্রাহকের সুরক্ষা ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
MAH – 12812 Signalbd.com