খেলাফুটবল

হামজা বললেন, ‘আমাদের জেতা উচিত ছিল’

শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে লেবাননের রেফারি হুসেইন আবোর শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় খেলোয়াড়দের মুখে নেমে আসে হতাশার ছায়া। জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমে গোলশূন্য ড্র নিয়ে ফিরতে হলো তাদের। ভারতীয় দলের সবচেয়ে বড় তারকা সুনীল ছেত্রী, যিনি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে তার নেওয়া হেডটিতে ছিল না তেমন জোর।

পুরো ম্যাচজুড়েই সুনীল ছেত্রী যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। ঘরের মাঠে তারকার নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স এবং দলের গোল করতে না পারার ব্যর্থতা মিলিয়ে ভারতীয় শিবিরে নেমে আসে হতাশা। ম্যাচ শেষে কোচ মানালো মার্কেজ বলেন, ‘ভারত বাজে ম্যাচ খেলেছে।’

অন্যদিকে, বাংলাদেশ শিবিরে ছিল উল্টো চিত্র। বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করলেও বাংলাদেশ দল দাপুটে ফুটবল খেলেছে। ম্যাচে ভারত বল পজেশনে এগিয়ে থাকলেও, গোলের সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শিবিরে তাই ছিল আনন্দের বন্যা।

শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের এই রাতটি রাফিয়া চৌধুরীর জন্য ছিল বিশেষ। বাংলাদেশের হয়ে ছেলে হামজা চৌধুরীর অভিষেক ম্যাচ দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘এটা মাত্র শুরু। আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে সামনে। বাংলাদেশ দল খুব ভালো খেলেছে। আমরা খুব খুশি ম্যাচ দেখে।’

হামজার স্ত্রী অলিভিয়া চৌধুরীর অনুভূতিও ছিল একই রকম। অ্যাওয়ে ম্যাচে এই ড্র বাংলাদেশের কাছে জয়ের মতোই। অলিভিয়া বলেন, ‘আমি ভীষণ খুশি। হামজা ভালো খেলেছে। বাংলাদেশ দলও ভালো খেলেছে। এই খেলাটাই আমরা আশা করছিলাম। আমাদের আশা পূর্ণ হয়েছে।’

ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে সাংবাদিকেরা হামজা চৌধুরীকে ঘিরে ধরেন। নিজের ও দলের পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত হামজা। তবে জয়টা বাংলাদেশের প্রাপ্য ছিল বলেই তিনি মনে করেন, ‘আমরা কিছু মিস করছি। ফুটবলে মিস হতেই পারে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও মিস হয়। ফলে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। এটা আমাদের জন্য খারাপ দিন ছিল। তবে আমাদের জেতা উচিত ছিল।’

জাতীয় সংগীতের সময় নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে হামজা বলেন, প্রথমবারের মতো এমন অনুভূতি তাকে আরও ভালো খেলতে উজ্জীবিত করেছে। দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে হামজা বলেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পেরেছি, এতে আমি গর্বিত। তবে এক ড্রতেই শেষ নয়। আমরা অনেক দূর যেতে চাই।’

বাংলাদেশের গ্রুপের অন্য ম্যাচে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়েছে। ফলে চারটি দলেরই পয়েন্ট এখন সমান। গ্রুপ সেরা দল ২০২৭ সালে সৌদি আরবে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশও এখন চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ম্যাচ শেষে বলেন, ‘অ্যাওয়ে ম্যাচে এক পয়েন্ট পেয়েছি। প্রথমার্ধে অনেক সুযোগ পেয়েও মিস করেছি। আমাদের জেতা উচিত ছিল। যাই হোক, আমরা এশিয়া কাপে খেলার আশা রাখি। আজকের পর সেটা সম্ভব মনে হচ্ছে।’

হামজার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘সে ভালো খেলেছে। যে পর্যায় থেকে সে এসেছে, সেই মান অনুযায়ীই খেলেছে। অন্যরা তাকে সহায়তা করেছে।’

বাংলাদেশ দল ভারতকে তেমন সুযোগই দেয়নি। এটাই এ ম্যাচের বড় প্রাপ্তি। গোল মিস করার আক্ষেপও যেন একঅর্থে জয়ের অনুভূতি দিচ্ছে দলকে। প্রথমার্ধেই ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়া যেত।

ভারতীয় সাংবাদিকেরা বাংলাদেশ দলের প্রশংসা করে বলেন, অ্যাওয়ে ম্যাচে এমন দাপুটে ফুটবল যারা খেলতে পারে, ভবিষ্যতে সেই দলের আরও ভালো না করার কোনো কারণ নেই।

১০ জুন ঢাকায় সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের পরের ম্যাচ। শিলং থেকে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি নিয়ে দেশে ফিরবে হামজা ও তার দল।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button