
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত আর্জেন্টিনার উপকূলীয় শহর বাহিয়া ব্লাঙ্কা। প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। অনেক বাসিন্দাকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হতে হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ডাক্তার হোসে পেনা হাসপাতালও সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওগুলো বন্যার ভয়াবহতা ফুটিয়ে তুলেছে। হাঁটুসমান পানির মধ্য দিয়ে নার্সরা নবজাতকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন—এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য সারা বিশ্বের মানুষের মন কাঁদিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)। তারা ঘোষণা দিয়েছে, আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দল যত গোল করবে, বাহিয়া ব্লাঙ্কার তত সংখ্যক পরিবারকে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এই অনন্য মানবিক প্রচেষ্টার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আন গোল পোর আন তেকো’—যার অর্থ ‘একটি গোলের জন্য একটি ছাদ’।
বন্যার্তদের পাশে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন
এএফএ লাতিন আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা ‘তোকো’-এর সঙ্গে যৌথভাবে বাহিয়া ব্লাঙ্কার বন্যার্তদের জন্য জরুরি আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি তারা খাবার, পোশাক ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবে।
এএফএ সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যাদের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে খেলোয়াড়েরা মাঠে যেমন লড়াই করেন, তেমনি আমরা সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে চাই।”
গোলের সঙ্গে বাড়ির সংখ্যা বাড়বে
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জাতীয় দল ছয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে, যা সবই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের অংশ। এ ছাড়া আরও কয়েকটি প্রদর্শনী ম্যাচও খেলার কথা রয়েছে। প্রতিটি গোল মানে বাহিয়া ব্লাঙ্কার আরও একটি বাড়ি।
লিওনেল স্কালোনির দল এরই মধ্যে দুটি ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ের বিপক্ষে থিয়াগো আলমাদার একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় তারা। এরপর নিজেদের মাঠে অনূর্ধ্ব-২০ দলের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয় পায় আর্জেন্টিনা জাতীয় দল। কোচ স্কালোনি নিজেই মাঠে নেমেছিলেন এই ম্যাচে।
অর্থাৎ এ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জাতীয় দল মোট তিনটি গোল করেছে। ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাহিয়া ব্লাঙ্কায় এএফএ তিনটি নতুন বাড়ি নির্মাণ করবে অথবা সমপরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
বিপর্যস্ত শহরের পাশে খেলোয়াড় ও সমর্থকরা
বন্যার্তদের সহায়তায় ইতিমধ্যেই আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমী দর্শক ও সমর্থকেরাও এগিয়ে এসেছেন। জাতীয় দলের প্রস্তুতি ম্যাচের টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ সম্পূর্ণভাবে বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য দান করা হয়েছে। টিকিটের দাম ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার আর্জেন্টাইন পেসো (প্রায় ২ হাজার ২৮৫ থেকে ৩ হাজার ৪২০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছিল।
লিওনেল মেসিসহ জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। মেসি লিখেছেন, “বাহিয়া ব্লাঙ্কার মানুষদের এই কঠিন সময়ে আমাদের সহানুভূতি ও সাহায্য প্রয়োজন। আমরা সবাই মিলে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।”
ব্রাজিলের বিপক্ষে বড় ম্যাচের অপেক্ষা
আগামী বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের বিপক্ষে ঐতিহ্যগতভাবেই হাইভোল্টেজ ম্যাচ হয়ে থাকে। এবার এই ম্যাচের বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাবে বন্যার্তদের সহায়তার বিষয়টি।
এই উদ্যোগের ফলে মাঠের প্রতিটি গোল শুধু জয়ের প্রতীক নয়, বরং একটি নতুন আশ্রয়ের আলো হয়ে উঠবে বন্যাদুর্গতদের জন্য। আর্জেন্টিনার ফুটবলের এই মানবিক উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে।