
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার জেস জোনাসেনের ক্যারিয়ারে সাফল্যের কোনো কমতি নেই। দেশের হয়ে খেলছেন ১১ বছর ধরে, জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা। চারটি অ্যাশেজ, একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং কমনওয়েলথ গেমসের স্বর্ণপদক তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে রয়েছে। এছাড়া ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশেও ব্রিসবেন হিটের হয়ে দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেন তাঁকে ঘিরে রয়েছে অদ্ভুত এক দুর্ভাগ্য! বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ফাইনালে খেললেও শিরোপা হাতে তুলতে পারছেন না তিনি। গত দুই বছরে টানা সাতটি ফাইনালে হেরেছেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
শুরুটা হয়েছিল মেয়েদের আইপিএল দিয়ে
জোনাসেনের সর্বশেষ কোনো শিরোপা জয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন অস্ট্রেলিয়া মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। কিন্তু এরপর থেকে যেন তাঁর ভাগ্যে শুধুই রানার্স আপ হওয়ার গ্লানি লেখা ছিল। ২০২৩ সালেই উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগের (ডব্লিউপিএল, যা মেয়েদের আইপিএল নামে পরিচিত) প্রথম আসরের ফাইনালে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেন তিনি। কিন্তু মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ফাইনালে দিল্লি হারলে শিরোপা অধরা থেকেই যায়।
এরপর সেই বছরের নভেম্বরে মেয়েদের বিগ ব্যাশ লিগের ফাইনালে খেলেন তিনি ব্রিসবেন হিটের হয়ে। সেখানে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের কাছে মাত্র ৩ রানে হেরে যায় তাঁর দল।
২০২৪: দুর্ভাগ্যের বছর!
২০২৪ সাল ছিল জেস জোনাসেনের জন্য আরও হতাশার। একের পর এক ফাইনালে খেলেও একবারও ট্রফি হাতে তুলতে পারেননি তিনি।
- উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ (মার্চ ২০২৪): দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ফাইনালে ওঠেন, কিন্তু মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কাছে আবারও পরাজিত হন।
- দ্য হান্ড্রেড (আগস্ট ২০২৪): ওয়েলশ ফায়ারের হয়ে ফাইনালে উঠেও শিরোপা বঞ্চিত থাকেন।
- সিপিএল (সেপ্টেম্বর ২০২৪): ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের হয়ে ফাইনালে খেলেন, কিন্তু জয় অধরা থেকে যায়।
- বিগ ব্যাশ লিগ (নভেম্বর ২০২৪): ব্রিসবেন হিটের হয়ে আরেকটি ফাইনালে অংশ নেন, কিন্তু প্রতিপক্ষ দল আবারও শিরোপা ছিনিয়ে নেয়।
২০২৫: দুর্ভাগ্যের ধারা অব্যাহত
২০২৫ সালেও সেই একই গল্প! গতকাল রাতে উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে আবারও দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে মাঠে নামেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, এবারও হারতে হলো মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কাছে।
এই নিয়ে গত দুই বছরে টানা সাতটি ফাইনালে পরাজয়ের সাক্ষী হলেন জেস জোনাসেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন দুর্ভাগ্য খুব কম ক্রিকেটারেরই হয়েছে।
দুর্ভাগ্য নাকি কাকতালীয়?
জোনাসেনের এই ফাইনাল হারকে অনেকে ‘কুফা’ বলে ব্যাখ্যা করছেন। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এটি হয়তো নিছক কাকতালীয় ব্যাপার। কারণ দলীয় খেলায় একজন ক্রিকেটারের একার কারণে দল হেরে যায় না।
তবে, খেলোয়াড়দের জন্য ফাইনালে টানা হার একটি মানসিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। জোনাসেনের ক্ষেত্রেও হয়তো একই ঘটনা ঘটছে।
আশার আলো
দুর্ভাগ্যের এই কালো ছায়া কাটিয়ে উঠতে হলে জোনাসেনকে নিজের খেলায় আরও মনোযোগ দিতে হবে। তিনি একজন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার এবং যেকোনো মুহূর্তে ফর্মে ফিরতে পারেন। ক্রিকেটবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের পরাজয় একজন খেলোয়াড়কে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
শেষ কথা
জেস জোনাসেন একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার। টানা সাতটি ফাইনালে হারলেও তাঁর প্রতিভা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রিকেটে ভাগ্য কখনও কখনও বিপক্ষে যায়, কিন্তু ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই একজন খেলোয়াড়ের সত্যিকারের মান নির্ধারণ করে।
ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার কি দুর্ভাগ্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন? সময়ই দেবে সেই উত্তর!