সাড়ে চার শ বছর আগের এক অনন্য মসজিদ: বখশি হামিদ মসজিদ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মধ্য ইলশা গ্রামে অবস্থিত বখশি হামিদ মসজিদ, যা সাড়ে চার শ বছর আগে নির্মিত হয়েছে, আজও তার অনন্য স্থাপত্যের জন্য মুগ্ধতা ছড়ায়। এই মসজিদটি সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার উদাহরণ।
মসজিদের স্থাপত্য
মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি দরজা রয়েছে, যার মধ্যে মাঝের দরজার ওপরে আরবিতে লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। শিলালিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “এই পবিত্র মসজিদ জাতি এবং ধর্মের খুঁটি। সুলতান সম্রাট সোলাইমান খান কররানীর আমলে নির্মিত এই মসজিদ। আল্লাহ তাঁকে সব আপদ বিপদ থেকে নিরাপদ রাখুন।”
মসজিদটি নির্মাণের সময় ব্যবহৃত হয়েছে ইট, পাথর ও সুরকি। মসজিদের চারপাশে সুপরিসর জায়গা রয়েছে এবং এর পূর্ব পাশে একটি শানবাঁধানো ঘাট ও বড় পুকুর রয়েছে।
ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠাতা
বখশি হামিদ মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আবদুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন অঞ্চলের কালেক্টর বা প্রশাসক। তিনি এলাকার শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নামেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব
১৯৭০ সালে সরকার বখশি হামিদ মসজিদকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। ১৯৭৫ সালে এটি সংরক্ষিত (প্রটেক্টেড মনুমেন্ট অ্যান্ড মৌন্ডস) তালিকায় স্থান পাওয়ার পর কিছু সংস্কার করা হয়। মোগল স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট, যার মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং ছোট গম্বুজ দুটি ধনুকের মতো করে ছাদের সঙ্গে যুক্ত।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন জানান, মাঝে একবার মসজিদের মূল নকশা পরিবর্তন করে রং করায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আপত্তি জানিয়েছিল। বর্তমানে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির অর্থসচিব শহীদুল ইসলাম জানান, মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মাসে ২০ হাজার টাকার ওপর খরচ হয়। মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া অর্থ ও স্থানীয়দের সহায়তায় এসব খরচ মেটানো হয়।
দর্শনার্থীদের আগমন
বর্তমানে সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এ মসজিদ দেখতে আসেন। ওই দুই দিন মুসল্লির সংখ্যা বেশি হয়। গবেষক আলমগীর মোহাম্মদ বলেন, “সাড়ে চার শ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদ মোগল স্থাপত্যরীতির এক অনন্য নিদর্শন। তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শিগগিরই বখশি হামিদ মসজিদের সৌন্দর্য ক্ষয়ে পড়তে পারে।”
যেভাবে যাওয়া যায়
শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে যেকোনো পরিবহনে পিএবি সড়ক (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) দিয়ে বাঁশখালী উপজেলার গুনাগরী খাসমহল এলাকায় নামতে হবে। সেখান থেকে পশ্চিমে মোশারফ আলী সড়ক হয়ে দুই কিলোমিটার গেলে মধ্য ইলশা গ্রামে ছায়াসুনিবিড় গ্রামে বখশি হামিদ মসজিদটির দেখা মিলবে।
বখশি হামিদ মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখতে পারে এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।