
ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড। লাহোরে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে পাকিস্তানকে চমকপ্রদ এক সেঞ্চুরিতে স্তব্ধ করে দেয় কিউইরা। গ্লেন ফিলিপসের ঝোড়ো সেঞ্চুরি এবং উইলিয়ামসন ও মিচেলের দৃঢ় ব্যাটিংয়ের মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৩৩০ রান সংগ্রহ করে। পাকিস্তান যথাযোগ্য প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা ২৫২ রানে থেমে যায়।
নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং
নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শুরু হয়েছিল বেশ ধীর গতিতে। প্রথম দিকে রান আসছিলো অতি সাবধানে, কিন্তু একবার যখন গ্লেন ফিলিপস তাণ্ডব শুরু করেন, তখন রানের গতি বাড়তে থাকে। ফিলিপস তার ৭৪ বলের ঝোড়ো ১০৬ রানের ইনিংসে ৬টি চার ও ৭টি ছক্কা হাঁকান। তার দুর্দান্ত ইনিংসের কারণে নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ৩৩০ রানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। ফিলিপস তার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শাহিন শাহ আফ্রিদির এক ওভারেই ২৫ রান সংগ্রহ করে।
ফিলিপসের সঙ্গে মিচেল ব্রেসওয়েলও ভাল ব্যাটিং করেন। শেষ ৫ ওভারে তারা মিলে ৮৪ রান সংগ্রহ করেন, যা দলের রানকে বাড়িয়ে দেয়। ফিলিপসের শেষ ৫৬ রান আসে মাত্র ১৯ বলে, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ফিলিপসের আগে, নিউজিল্যান্ডের ইনিংস গড়ে দেন দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান, কেন উইলিয়ামসন এবং ড্যারিল মিচেল। উইলিয়ামসন ৮৯ বলে ৫৮ রান করেন, অন্যদিকে মিচেল ৮৪ বলে ৮১ রান সংগ্রহ করেন। তারা দুজনে মিলে ১১২ বলের ৯৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন, যা নিউজিল্যান্ডকে একটি শক্তিশালী সংগ্রহে পৌঁছে দেয়।
পাকিস্তানের পক্ষে শাহিন শাহ আফ্রিদি ৩ উইকেট নেন, তবে তার ১০ ওভারে ৮৮ রান দেন। আবরার আহমেদ ৪১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন, তবে তারা বেশ কিছু বড় রান এড়াতে পারলেন না।
পাকিস্তানের ব্যাটিং সংগ্রাম
পাকিস্তান তার ইনিংসের শুরুটা ভালো করেছিল ফখর জামানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। তবে ২০১৫ সালের পর প্রথম ওপেন করতে নামা বাবর আজম দ্রুত ফিরে যান। ২৩ বল খেলে তিনি ১০ রান করেন। এরপর ফখর এক প্রান্তে অবিচল থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। তবে তাকে আর কোন সহায়ক ব্যাটসম্যান যোগ দিতে পারলেন না। ফখরের দুর্দান্ত ইনিংসের পর পাকিস্তানকে আঘাত পেতে হয়। তিনি ৬৯ বলে ৮৪ রান করেন, যেখানে ছিল ৭টি চার এবং ৪টি ছক্কা। ফখরের বিদায়ের পর পাকিস্তান আর ম্যাচে ফিরে আসতে পারেনি।
পাকিস্তান এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সালমান আগা এবং তায়াব তাহির, তবে সেটা একেবারে ক্ষণস্থায়ী ছিল। সালমান ৪০ রান এবং তায়াব ৩০ রান করেন, কিন্তু তারা কোনো বড় জুটি গড়তে পারেননি। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ২৫২ রানে থেমে যায়।
নিউজিল্যান্ডের বোলিং কৌশল
নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ে সফলতা এসেছে দুটি প্রধান বোলার, ম্যাট হেনরি এবং মিচেল স্যান্টনারের হাত ধরে। হেনরি ১০ ওভারে ৩ উইকেট নেন এবং স্যান্টনারও ৩ উইকেট সংগ্রহ করেন। তারা পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের বড় হুমকি হয়ে উঠেন। স্যান্টনারের অফ স্পিন এবং হেনরির পেস আক্রমণ পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের তৎপরতায় বাধা সৃষ্টি করে।
নিউজিল্যান্ডের বোলিং পরিকল্পনা ছিল খুবই সুসংগঠিত। তারা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়েছে, আর পাকিস্তানকে কখনই ম্যাচে প্রবেশ করতে দেয়নি।
ম্যাচের ফলাফল এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি
এই জয়টি নিউজিল্যান্ডের জন্য বড় একটি আত্মবিশ্বাসের সঞ্চয়। তাদের দলের প্রতিটি বিভাগ—ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং—দারুণভাবে কাজ করেছে। তাদের সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান গ্লেন ফিলিপস ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন, এবং তার ইনিংসই ছিল ম্যাচের অন্যতম হাইলাইট।
নিউজিল্যান্ডের এই জয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা শুরুর ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারিয়ে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করলো। আগামী ম্যাচগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তারা আরও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করতে পারে।
পাকিস্তান অবশ্য, তাদের ব্যাটিংয়ের দুর্বলতার জন্য দুঃখিত হতে হবে, বিশেষ করে যখন তারা একটি বড় রান তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ২৫২ রানে থেমে যায়। ফখর জামান ছাড়া অন্যদের পারফরম্যান্স ছিল খুবই নিম্নমানের। পাকিস্তানকে নিজেদের ব্যাটিং শক্তি আরো শক্তিশালী করতে হবে, বিশেষ করে তাদের ওপেনিং এবং মিডল অর্ডারকে সঠিকভাবে সংগঠিত করতে হবে।
পরবর্তী ম্যাচ
নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা আগামী সোমবার দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এই সিরিজে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হতে পারে, তবে নিউজিল্যান্ড যদি তাদের ফর্ম বজায় রাখতে পারে, তাহলে তারা এই ম্যাচেও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।