খেলাক্রিকেট

ইংল্যান্ড নিশ্চিত করল আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বর্জন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন গতকাল এক বোর্ড মিটিংয়ের পর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের কারণে নারীদের খেলাধুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ম্যাচ বর্জনের আহ্বান উঠেছিল, তবে ইসিবি শেষ পর্যন্ত খেলায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিতর্কের পটভূমি

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে নারীদের শিক্ষা, খেলাধুলা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর নারীদের ক্রিকেট দল থাকা বাধ্যতামূলক। তবে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রয়োগ করা হয়নি।

গত মাসে ব্রিটেনের ১৬০ জন পার্লামেন্ট সদস্য ইসিবির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে ইংল্যান্ড যেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচ বর্জন করে।

ইসিবির সিদ্ধান্ত

বোর্ড মিটিংয়ের পর রিচার্ড থম্পসন বলেন, “আফগানিস্তানে যা চলছে, তা নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের চূড়ান্ত উদাহরণ। নারী ও মেয়েশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী বিকশিত হচ্ছে, অথচ আফগানিস্তানে এটি পুরোপুরি বন্ধ। এটা হৃদয়বিদারক।”

তবে তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্প্রদায়ের একতাবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়াই সঠিক পথ। একতরফা ম্যাচ বয়কটের চেয়ে যৌথ পদক্ষেপ বেশি ফলপ্রসূ হবে। আমরা জেনেছি, আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণের জন্য ক্রিকেট অন্যতম আনন্দের উৎস। তাই আমরা এই ম্যাচটি খেলব।”

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান ম্যাচ

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫ শুরু হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান ‘বি’ গ্রুপের অংশ হিসেবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ২৬ ফেব্রুয়ারি মুখোমুখি হবে। ইংল্যান্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাও এই গ্রুপে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসিবির সিদ্ধান্তকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে বলছে। অন্যদিকে, ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ম্যাচ বর্জন না করে আইসিসির মাধ্যমে সমাধান খোঁজাই যুক্তিসংগত।

নারী ক্রিকেটারদের সহায়তা প্রসঙ্গে ইসিবির আহ্বান

ইসিবি আইসিসিকে আহ্বান জানিয়েছে, আফগানিস্তানের যেসব নারী ক্রিকেটার দেশ ছেড়েছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে। ইতিমধ্যে, এমসিসি ফাউন্ডেশন একটি তহবিল তৈরি করেছে, যেখানে ইসিবি ১ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছে।

সিদ্ধান্তের প্রভাব

ইংল্যান্ডের সিদ্ধান্তের ফলে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। তবে ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও আফগানিস্তানের রশিদ খানের লড়াই দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে।

আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর হয়, তা এখন দেখার বিষয়। তবে ক্রিকেট বিশ্বে এটি একটি বিতর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button