খেলা

বিসিবির ফলাফল ঘোষণার পরপরই ইশরাকের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

Advertisement

বিসিবি নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি নির্বাচনের ফল ‘জালিয়াতিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন পরিচালনা পর্ষদের ফলাফল ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গনেও চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচনে পুনরায় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এই ফলাফলের পরপরই বিএনপির যুবনেতা ইশরাক হোসেন তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

বিসিবি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা

সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় বিসিবি নির্বাচন। নির্ধারিত তিন ক্যাটাগরির ভোটে মোট ২৩ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত পরিচালক হিসেবে ঘোষিত হয় আরও দুইজনের নাম।

নির্বাচনে ভোট দেন দেশের প্রায় ১৯১ জন ভোটার। এর মধ্যে ১৫৬ জনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়, যা মোট ভোটারের প্রায় ৭৪ শতাংশ। অনেক বিভাগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা।
চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন বিভাগে আগেই ফল অনেকটা নির্ধারিত ছিল বলে জানা যায়। ফলে ভোটারদের আগ্রহও ছিল তুলনামূলক কম।

ইশরাকের তীব্র প্রতিক্রিয়া: “ভুয়া বোর্ডকে লাথি মেরে ছুঁড়ে ফেলা হবে”

ফল ঘোষণার পর বিকেলেই ইশরাক হোসেন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,

 “বিসিবির জালিয়াতির সিলেকশন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে সাধারণ জনগণ ও ক্রীড়া সংগঠকরা। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশকে স্থিতিশীল রাখতে এখন কিছু বলা হচ্ছে না। অচিরেই এই জাতীয় বেইমানদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে ইনশাআল্লাহ।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমাদের দেশের আইন মেনেই এই ভুয়া বোর্ড লাথি মেরে ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে।”
এই বক্তব্য প্রকাশের পর তার পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়, হাজারো সমর্থক ও অনুসারী সেখানে মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী বিসিবি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক

বিসিবি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। অতীতেও কয়েকবার নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নানা পক্ষ অভিযোগ তুলেছে।
বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব, কাউন্সিলর তালিকায় অসঙ্গতি ও স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে।

২০১৭ ও ২০২১ সালের নির্বাচনে যেমন অভিযোগ উঠেছিল, এবারের নির্বাচনেও সেই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসেছে।
বিরোধীদলীয় সমর্থকরা মনে করছেন, ক্রিকেট বোর্ডে নিরপেক্ষতা হারিয়ে যাচ্ছে, আর সেটিই দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।

বিসিবি নির্বাচনে কারা জয়ী হলেন

এবারের নির্বাচনে পুরোনো মুখরাই আবারও জয়ী হয়েছেন।
ক্যাটাগরি-১ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা বিভাগের আমিনুল ইসলাম ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আহসান ইকবাল চৌধুরী ও আসিফ আকবর, খুলনা বিভাগ থেকে আবদুর রাজ্জাক ও জুলফিকার আলী খান, সিলেট থেকে রাহাত শামস এবং বরিশাল থেকে শাখাওয়াত হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ক্যাটাগরি-৩ থেকে সর্বাধিক আলোচিত প্রার্থী ছিলেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট, যিনি ৪২ ভোটের মধ্যে ৩৫টি পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন।
এছাড়া ক্যাটাগরি-২ এ জয়ী হয়েছেন ফারুক আহমেদ, ইসতিয়াক সাদেক, শানিয়ান তানিম, আমজাদ হোসেনসহ ১২ জন।

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া

ইশরাক হোসেনের পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি ঘরানার নেতারা তার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানালেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এটিকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মন্তব্য হিসেবে অভিহিত করেছেন।

একজন ক্রীড়া বিশ্লেষক বলেন, “বিসিবি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হলেও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে এটি মুক্ত নয়। ফলে এমন প্রতিক্রিয়া নতুন কিছু নয়, বরং দীর্ঘদিনের বাস্তবতা।”

ক্রিকেটাঙ্গনে প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রশ্ন

নতুন বোর্ড নির্বাচিত হলেও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেক সংগঠক মনে করছেন, পরিবর্তনের সময় এখনো আসেনি। তারা মনে করেন, যেভাবে ভোটের আগে থেকেই ফলাফল অনুমেয় ছিল, তা ক্রিকেট প্রশাসনে আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।
দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে গোপনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে, মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে রাজনীতি এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বোর্ডে প্রবেশের ক্ষেত্রে।

ক্রীড়াঙ্গনের আস্থার সংকট

বিসিবির নির্বাচন শেষ হলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে এখন সবচেয়ে প্রয়োজন প্রশাসনিক সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
রাজনীতির প্রভাব কমিয়ে পেশাদার ক্রিকেট পরিচালনাই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।

বিসিবির নতুন নেতৃত্ব কার্যক্রম শুরু করলেও তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আস্থা পুনরুদ্ধার।
ইশরাক হোসেনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়—এটি ক্রীড়াঙ্গনের একটি গভীর অসন্তুষ্টির প্রতিফলনও হতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, নতুন বোর্ড কীভাবে এই বিতর্ক পেরিয়ে দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারে।

এম আর এম – ১৬৪৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button