জোতার মৃত্যু অবিশ্বাস্য লাগছে রোনালদোর কাছে

মাত্র ২৮ বছর বয়সে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড দিয়াগো জোতা ও তার ভাই। এই অকাল মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ ক্রীড়াঙ্গন। বিশেষ করে জাতীয় দলের সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো মেনে নিতে পারছেন না জোতার মৃত্যু। সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছেন আবেগঘন বার্তা। ফুটবল দুনিয়ায় যেন নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বিশ্ব ফুটবল জগত হারালো এক তরুণ প্রতিভাকে। স্পেনের জামোরায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ও লিভারপুল তারকা দিয়াগো জোতা এবং তার ভাই আন্দ্রে। এই দুর্ঘটনার খবরে স্তব্ধ গোটা ক্রীড়া বিশ্ব। শোক জানাচ্ছেন সতীর্থরা, কোচ, ক্লাব ও ভক্তরা। এই ঘটনায় সবচেয়ে মর্মাহতদের একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, যিনি নিজেই এই মৃত্যুকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
কিভাবে মারা গেলেন?
স্থানীয় সময় রাত আনুমানিক ১২টা ৩০ মিনিটে স্পেনের জামোরার সেরনাদিলা অঞ্চলে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একটি ল্যাম্বরগিনি গাড়িতে ছিলেন দিয়াগো ও তার ভাই আন্দ্রে। ওভারটেক করার সময় গাড়ির টায়ার বিস্ফোরণ ঘটে এবং গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের ডিচে পড়ে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানায়, গাড়িটির গতি ছিল অনেক বেশি। টায়ার বিস্ফোরণের পর চালক আর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। এ সময় আশপাশের লোকজন দ্রুত আগুন নিভাতে চেষ্টা করলেও ততক্ষণে প্রাণহানি ঘটে যায়।
রোনালদোর হৃদয়বিদারক প্রতিক্রিয়া
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না। এই তো সেদিনই আমরা জাতীয় দলে একসাথে খেলেছি, তুমি সবে বিয়ে করেছিলে। তোমার পরিবার, স্ত্রী ও সন্তানের জন্য আমার গভীর সমবেদনা রইল। আমি জানি তুমি সবসময় তাদের পাশে থাকবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “শান্তিতে বিশ্রাম নাও দিয়াগো ও আন্দ্রে। আমরা সবাই তোমাদের মিস করব। তোমার এই চলে যাওয়া ফুটবলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
ফুটবল জগতে শোকের ছায়া
জোতার মৃত্যুতে শুধু পর্তুগাল নয়, বরং গোটা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। লিভারপুল ক্লাব থেকে শুরু করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদসহ বহু ক্লাব শোক বার্তা প্রকাশ করেছে।
লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেন, “সে শুধু একজন অসাধারণ ফুটবলারই নয়, একজন ভালো মানুষ, একজন দায়িত্বশীল স্বামী ও পিতা ছিল। এমন একজন মানুষকে আমরা হারালাম, যা কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়।”
জোতার ফুটবল ক্যারিয়ারের ঝলক
দিয়াগো জোতা ২০১৬ সালে পর্তুগালের জাতীয় দলে পা রাখেন। তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে তিনি দ্রুতই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। ২০২০ সালে তিনি লিভারপুলে যোগ দেন এবং ক্লপের অধীনে নিজেকে প্রমাণ করেন। ইউরো ও নেশনস লিগে পর্তুগালের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
মাত্র কয়েকদিন আগেই নিজের বিবাহ সম্পন্ন করেন জোতা। পরিবার নিয়ে নতুন জীবনের সূচনা করলেও নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে তা স্থায়ী হলো না।
সামাজিক মাধ্যমে শোকবার্তার ঢল
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোতা ও আন্দ্রের স্মরণে শোকবার্তা দেওয়া শুরু হয়। ফুটবল খেলোয়াড়দের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পোস্ট করছেন।
বিশ্বখ্যাত ক্লাবগুলো তাদের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে একে একে শোক প্রকাশ করে বলেছে, “তোমার মতো ফুটবলাররা কখনোই হারিয়ে যায় না। তুমি সবসময় ফুটবলপ্রেমীদের মনে থেকে যাবে।”
“এই তো সেদিনই আমরা জাতীয় দলে একসাথে খেলেছিলাম, সবে বিয়ে করেছিলে তুমি।”—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
সারসংক্ষেপ
দিয়াগো জোতা ও তার ভাই আন্দ্রের অকাল মৃত্যু ক্রীড়াবিশ্বের জন্য এক বড় ধাক্কা। তাদের মৃত্যু যেন স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবন কতটা অনিশ্চিত। একটি মুহূর্তেই সব বদলে যেতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জোতা শুধু একজন ফুটবলারই নন, তিনি হবেন এক অনুপ্রেরণার নাম।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই শূন্যতা কে পূরণ করবে?
এম আর এম – ০১৫৭, Signalbd.com