খেলা

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচ ছেড়ে দিল জর্ডান

 সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ফিফা অনূর্ধ্ব-১৯ বাস্কেটবল বিশ্বকাপে ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচে অংশ না নিয়ে জর্ডান জানিয়ে দিলো স্পষ্ট বার্তা। গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদেই এই কঠোর পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ক্রীড়াঙ্গনে সাহসী সিদ্ধান্ত

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় তুলেছে। প্রাণ হারাচ্ছে হাজারো নিরীহ মানুষ, শিশু, নারী ও বয়স্করা। এই বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবার ক্রীড়াঙ্গনে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে জর্ডান। সুইজারল্যান্ডে চলমান ফিফা অনূর্ধ্ব-১৯ বাস্কেটবল বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপে নিজেদের নির্ধারিত ম্যাচে ইসরায়েলের বিপক্ষে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

জানা গেছে, ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল রোববার, ২৯ জুন। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও জর্ডান দল মাঠে না নামায় ম্যাচটি বাতিল ঘোষণা করে আয়োজক কমিটি। ম্যাচের ফলাফল হিসেবে ইসরায়েলকে ২০-০ ব্যবধানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

ফেডারেশনের নীরবতা, সংবাদমাধ্যমের স্পষ্ট বার্তা

জর্ডানিয়ান বাস্কেটবল ফেডারেশন এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও দেশটির জনপ্রিয় দৈনিক আদ-দুস্তুর জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় শিশু ও সাধারণ মানুষদের উপর চলমান গণহত্যার প্রতিবাদেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জর্ডান অনূর্ধ্ব-১৯ বাস্কেটবল দল।

বিশ্বজুড়ে মানবিক বিবেচনায় ক্রীড়াজগতকে এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানিয়ে বহু সংগঠন প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জর্ডানের এই সিদ্ধান্ত সেই প্রতিবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ম্যাচ হারালেও টুর্নামেন্ট থেকে বাদ নয়

ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জনের কারণে পয়েন্ট হারিয়েছে জর্ডান। গ্রুপের পয়েন্ট তালিকায় এখন তারা রয়েছে চতুর্থ স্থানে। দুই ম্যাচে তাদের সংগ্রহ মাত্র ১ পয়েন্ট। অন্যদিকে, দুটি ম্যাচেই জিতে ইসরায়েল রয়েছে শীর্ষে। সুইজারল্যান্ড ও ডমিনিকান রিপাবলিক যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।

তবে ফরম্যাট অনুযায়ী, গ্রুপ পর্বের সব দলই শেষ ষোলোতে জায়গা পাবে। তাই এই ম্যাচ হারলেও জর্ডানের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে শক্তিশালী দল।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: খেলাধুলায় রাজনীতির অভিযোগ

জর্ডানের এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েলের বাস্কেটবল ফেডারেশন। সংস্থাটির সভাপতি আমোস ফ্রিশমান অভিযোগ করেছেন, খেলাধুলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে একজন ক্রীড়াপ্রেমী দেশ এমন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়ে রাজনীতি টেনে আনছে।”

তবে আন্তর্জাতিক পরিসরে বহু মানুষ মনে করছেন, মানবতার প্রশ্নে এই সিদ্ধান্ত একেবারে যৌক্তিক এবং তা একপ্রকার নৈতিক অবস্থান।

অতীতেও দেখা গেছে এমন প্রতিবাদ

খেলাধুলায় রাজনৈতিক বা মানবিক কারণে প্রতিপক্ষকে বর্জনের ঘটনা একেবারে নতুন নয়। অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের প্রতিবাদেও বহু দেশ তাদের বিরুদ্ধে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এমনকি ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্ট থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করেছিলো বহু দেশ ও সংস্থা।

জর্ডানের এই সিদ্ধান্ত তাই একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং বিশ্ব মানবতার পক্ষ থেকে একটি অবস্থান।

ভবিষ্যৎ বার্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি

জর্ডান অনূর্ধ্ব–১৯ দলের এই সাহসী পদক্ষেপ এখন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই এই ঘটনাকে দেখছেন এক নতুন ধরণের প্রতিবাদের সূচনাপর্ব হিসেবে — যেখানে ক্রীড়াঙ্গনও বিশ্ব রাজনীতিতে মানবিকতার পাশে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরণের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে আরও দেশকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর নীতিমালা কেমন হবে — সেটিও নজর রাখার বিষয়।

“গাজার শিশুদের কান্নার সামনে এই জয়-পরাজয় কিছুই না” —জর্ডানি নাগরিকদের অভিমত।

সারসংক্ষেপঃ  

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে জর্ডানের এই পদক্ষেপ শুধু একটি ক্রীড়া ম্যাচ বর্জনের সিদ্ধান্ত নয়; এটি এক প্রতীকী প্রতিবাদ, যা গোটা বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। মানবতা যদি আজ মুখ না খোলে, তাহলে ইতিহাসে তার দায় এড়ানো যাবে না।

তবে প্রশ্ন থেকে যায় — খেলাধুলায় নৈতিকতার স্থান কোথায়? ভবিষ্যতে কি আরও দেশ এমন প্রতিবাদে শামিল হবে?

এম আর এম – ০১১৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button