খেলাক্রিকেট

পাঞ্জাবকে ৬ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতলো ব্যাঙ্গালুরু

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। বহু বছরের প্রতীক্ষা শেষে অবশেষে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরলো ব্যাঙ্গালুরুর মাথায়। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত রোমাঞ্চকর ফাইনালে তারা ৬ রানে হারায় পাঞ্জাব কিংসকে। এই জয়ে আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার শিরোপা জয় করলো ব্যাঙ্গালুরু।

ব্যাঙ্গালুরুর সংগ্রাম ও সংগ্রহ: ১৯০ রানের চ্যালেঞ্জ

ফাইনালের উত্তেজনায় টস হেরে ব্যাট করতে নামে ব্যাঙ্গালুরু। শুরুটা হয় ঝড়ো গতিতেই। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৬ রানে ফিল সল্ট আউট হলে ব্যাটিং অর্ডারে কিছুটা চাপে পড়ে তারা। তবু, উইকেটে থেকে ইনিংস গুছিয়ে নেন অভিজ্ঞ বিরাট কোহলি। তিনি ৩৫ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল চারটি চার ও একটি ছক্কার মার।

রানরেট ধরে রাখতে নিয়মিত ছোট ছোট ক্যামিও ইনিংস খেলেন দলের অন্যান্য ব্যাটাররা। রজত পাতিদার করেন ২৬ রান, লিভিংস্টোন ২৫, মায়াঙ্ক আগরওয়াল ২৪, জিতেশ শর্মা ২৪ এবং রোমারিও শেফার্ড ১৭ রান। ইনিংসের শেষ দিকে কেউই বড় স্কোর গড়তে না পারলেও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দলটি পৌঁছে যায় ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯০ রানে।

এই সংগ্রহটিকে ফাইনালের উপযুক্ত লক্ষ্য বলেই মনে করছিল ব্যাঙ্গালুরুর শিবির।

পাঞ্জাবের উত্তেজনাপূর্ণ ইনিংস: শুরুতে জ্বলে, শেষে ঝিমিয়ে

পাঞ্জাব কিংসের লক্ষ্য ছিল ১৯১ রান। শুরুটা করেন প্রিয়াংশ আর্য, প্রথম বলেই চার মেরে আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দেন। আরেক ওপেনার প্রভসিমরান সিং প্রথম ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকান। দ্বিতীয় ওভারে আসে আরও দুইটি চারসহ ১০ রান। মনে হচ্ছিল পাঞ্জাব ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে এসেছে।

তবে ধীরে ধীরে ম্যাচের চিত্র পাল্টাতে থাকে। পঞ্চম ওভারে ২৪ রানে ব্যাট করতে থাকা প্রিয়াংশ আউট হলে চাপ তৈরি হয়। এরপর জশ ইংলিস ও প্রভসিমরান ইনিংসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিলেও নবম ওভারে প্রভসিমরান বিদায় নেন। এক বল পরে শ্রেয়াস আইয়ার মাত্র ১ রান করে শেফার্ডের বলে কাটা পড়েন। উইকেট পতনের ধারা চলতে থাকে।

তবে ইংলিস দৃঢ়তা দেখিয়ে ২৩ বলে ৩৯ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন। তাঁর ইনিংসে ছিল চারটি চার ও একটি ছক্কা। ১৩তম ওভারে আউট হন তিনিও। তখন থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আবার ব্যাঙ্গালুরুর দিকে হেলে পড়ে।

শেষ দিকে শশাঙ্ক সিং-এর লড়াই: আশা দেখিয়ে হতাশার পরিসমাপ্তি

পাঞ্জাবের ইনিংস যখন দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, তখন দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান শশাঙ্ক সিং। তাঁকে সঙ্গ দিতে আসেন নেহাল ওয়াধেরা। দুজন মিলে ১৫তম ওভারে ব্যাটিং গতি বাড়ান। কিন্তু ১৬তম ওভারে নেহাল আউট হয়ে গেলে প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দ্বিতীয় বলেই বিদায় নেন স্টয়নিস। এই ধাক্কাগুলো পাঞ্জাবকে পিছিয়ে দেয়।

শেষ ১৮ বলে দরকার ছিল ৪৭ রান। ১৮তম ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাই আউট হন এবং আসে মাত্র ৫ রান। ফলে শেষ ১২ বলে দরকার পড়ে ৪২ রানের। এখানেই শুরু শশাঙ্ক সিং-এর অবিশ্বাস্য চেষ্টা।

শেষ দুই ওভারে তিনি চারটি ছক্কা ও দুটি চারে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৩৫ রান। তবে ম্যাচ বাঁচাতে তা যথেষ্ট ছিল না। পাঞ্জাব থেমে যায় ১৮৪ রানে, মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় ব্যাঙ্গালুরু। শশাঙ্ক সিং ৩৩ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন এবং ম্যাচের একমাত্র সাহসী লড়াকু ভুমিকা রাখেন।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর ইতিহাস গড়া রাত

বহু বছর ধরে আইপিএলে খেলে চলা ব্যাঙ্গালুরু কখনোই শিরোপার স্বাদ পায়নি। প্রতিবারই তাদের নিয়ে জোর আলোচনা চললেও ফাইনাল ম্যাচে হোঁচট খেয়ে তারা ফিরে যেত। কিন্তু এবারের গল্প ভিন্ন। অভিজ্ঞতা, পরিকল্পনা ও দলগত পারফরম্যান্সে তারা জিতেছে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।

বিরাট কোহলি, যিনি বহু বছর ধরে দলের প্রাণ, এই জয়কে “ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত” বলে উল্লেখ করেন ম্যাচ পরবর্তী সাক্ষাৎকারে।

ম্যাচসারাংশ

  • ম্যাচ: আইপিএল ২০২৫ ফাইনাল
  • স্থান: নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, আহমেদাবাদ
  • ফল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ৬ রানে জয়ী
  • ব্যাটিং হাইলাইটস (ব্যাঙ্গালুরু):
    • বিরাট কোহলি – ৪৩ (৩৫ বল)
    • রজত পাতিদার – ২৬
    • লিভিংস্টোন – ২৫
  • ব্যাটিং হাইলাইটস (পাঞ্জাব):
    • শশাঙ্ক সিং – ৬১* (৩৩ বল)
    • জশ ইংলিস – ৩৯ (২৩ বল)
  • ম্যাচ সেরা: বিরাট কোহলি (সম্ভাব্য)

উপসংহার

এই জয় শুধু ট্রফি জেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি দলের লম্বা সময় ধরে চলা প্রচেষ্টার ফসল। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর এই জয় প্রমাণ করে দিল—পরিশ্রম, ধৈর্য ও কৌশলের সঠিক ব্যবহারে যে কোনও দলই ইতিহাস গড়তে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button