দেখা গেছে চাঁদ, সৌদিতে ঈদ ৬ জুন

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর দেশটিতে পবিত্র হজ ও ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। সৌদি আরবের সুপ্রিম কাউন্সিল ঘোষণা করেছে যে, মঙ্গলবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় দেশটির আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এর ফলে ইসলামি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৪৪৬ হিজরি সালের জিলহজ মাস শুরু হচ্ছে ২৮ মে থেকে। সেই হিসেবে আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ, আর ৬ জুন উদযাপিত হবে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা।
হজ ও ঈদুল আজহার গুরুত্ব
ইসলাম ধর্মে হজ একটি ফরজ ইবাদত, যা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের জন্য জীবনে অন্তত একবার পালন করা আবশ্যক। হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। হজ পালন শুরু হয় জিলহজ মাসে এবং এর প্রধান পর্ব আরাফার দিনে, অর্থাৎ ৯ জিলহজে অনুষ্ঠিত হয়। মুসল্লিরা এই দিনে মক্কার নিকটে আরাফার ময়দানে জড়ো হন, যেখানে হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। আর এর পরদিন অর্থাৎ জিলহজের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়, যাকে কুরবানির ঈদও বলা হয়।
সৌদি আরবের ঘোষণা
সৌদি সুপ্রিম কাউন্সিলের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশটির বিভিন্ন স্থানে জিলহজ মাসের চাঁদ প্রত্যক্ষ করা গেছে। এই চাঁদ দেখা যাওয়ার ভিত্তিতেই হিজরি ক্যালেন্ডারের ১২তম মাসের সূচনা নিশ্চিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার ও বাহরাইনও এই তারিখ অনুযায়ী তাদের ধর্মীয় অনুশাসন পালন করে থাকে।
দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে চাঁদ দেখার পরই ঈদের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। জিলহজ মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হজ মৌসুমও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যায়।
মুসলিম বিশ্বের প্রস্তুতি
সৌদির এই ঘোষণার পর থেকেই হজ পালন ও ঈদুল আজহার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মুসলিম বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মানুষরা। হজে অংশগ্রহণকারী হাজিদের জন্য এই দিনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৮ জিলহজ থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় এবং ৯ জিলহজে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হয়ে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ১০ জিলহজ কুরবানির মাধ্যমে ঈদুল আজহা উদযাপন করেন তারা।
প্রতি বছরই লাখ লাখ মুসলমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে হজ পালন করতে যান। ২০২৫ সালের হজেও লক্ষাধিক হজযাত্রী ইতোমধ্যে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন এবং বাকিরাও যাচ্ছেন। হজ উপলক্ষে সৌদি সরকারও নিয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুদৃঢ় ব্যবস্থাপনা।
বাংলাদেশে ঈদের তারিখ কী?
বাংলাদেশে ঈদুল আজহার সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। ২৮ মে (বুধবার) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক বৈঠক বসবে, যেখানে দেশের আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে কিনা তা পর্যালোচনা করে ঈদের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশে চাঁদ দেখা গেলে জিলহজ মাস শুরু হবে ২৯ মে থেকে। সে ক্ষেত্রে ৯ জিলহজ অর্থাৎ ৬ জুন হবে আরাফাহ দিবস এবং ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে ৭ জুন (শনিবার)। তবে যদি ২৮ মে চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে জিলকদ মাস ৩০ দিনে পূর্ণ হয়ে ঈদ হতে পারে ৮ জুন (রবিবার)। ফলে এখনই সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না কবে ঈদ হবে বাংলাদেশে—সব নির্ভর করছে চাঁদ দেখার ওপর।
ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব
ঈদুল আজহা মুসলিমদের একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই ঈদে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করেন, যার স্মৃতি জড়িয়ে আছে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এর কুরবানির ইতিহাসে। কুরবানিকৃত পশুর মাংস তিন ভাগে ভাগ করে একটি ভাগ আত্মীয়স্বজন, একটি ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং বাকিটুকু নিজের পরিবারের জন্য রাখা হয়।
এই ঈদে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সহানুভূতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। বিশেষ করে গরিব ও অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মুসলমানরা চেষ্টা করেন কুরবানির মাধ্যমে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে।
হজ ও কুরবানির বিধান
হজ পালন ও কুরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশাসন। হজ ফরজ হলেও কুরবানি হচ্ছে ওয়াজিব ইবাদত, যা প্রাপ্তবয়স্ক, সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত। কুরবানির পশু হতে হবে নির্দিষ্ট বয়সের এবং নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণকারী। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সরকার নির্ধারিত হাট ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কুরবানির পশু কেনাবেচা চলছে পুরোদমে।
শেষ কথা
সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যাওয়ায় হজ ও ঈদুল আজহার দিন চূড়ান্ত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অপেক্ষা করছেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার জন্য। ঈদের দিন নির্ধারিত হওয়ার পরপরই সারাদেশে কুরবানির প্রস্তুতি শুরু হবে পূর্ণ উদ্যমে।
পবিত্র ঈদুল আজহার মাধ্যমে যেন আমরা ত্যাগ ও উৎসর্গের মহান শিক্ষা বাস্তব জীবনে ধারণ করতে পারি—এ কামনাই সকল মুসলমানের।