যতদিন আছি নিশ্চিত থাকেন দেশের অনিষ্ট হবে এমন কোনও কাজ হবে না: ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি যতদিন দায়িত্বে আছেন, দেশের অনিষ্ট হবে এমন কোনও কাজ হবে না। তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, এবং বলেছেন, এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে তিনি নিজেকে অপরাধী মনে করবেন। রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য রাতে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে উপস্থিত রাজনৈতিক দলের নেতারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে চলমান সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। শফিকুল আলম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ড. ইউনূসের প্রতি তাদের আস্থা প্রকাশ করেছেন। তারা সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য শুরু হওয়া কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”
বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, দেশ বর্তমানে একটি ‘বড় যুদ্ধাবস্থার’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে থেকে কিছু গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের বিভাজন থেকে মুক্তি পেতে হবে। আমরা যতটুকু অগ্রগতি অর্জন করেছি, তা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায়।” তিনি আরও জানান, সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে পেরে তিনি মনে সাহস পেয়েছেন।
নির্বাচনের সময়সীমা
নির্বাচনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম জানান, ড. ইউনূস আবারও নিশ্চিত করেছেন যে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই সময়সীমা ৩০ জুনের পর কখনোই প্রসারিত হবে না। এই প্রতিশ্রুতিতে বৈঠকে উপস্থিত রাজনৈতিক দলগুলো সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সবাই একমত হয়েছেন এবং এটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন: তিন মূল লক্ষ্য
প্রেস কনফারেন্সে শফিকুল আলম জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান কাজ হচ্ছে সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। তিনি বলেন, “প্রথমে সংস্কার সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে নির্বাচনের বিষয়ে সকলের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে।” তিনি আরও জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করা হবে, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোই সরকারের মূল লক্ষ্য।
পূর্ববর্তী বৈঠক
উল্লেখ্য, শনিবার (২৪ মে) রাতে ড. ইউনূস বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনালিস্ট কনফারেন্স পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে ড. ইউনূস সকল পক্ষের মতামত গ্রহণ করছেন, যাতে সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হয়।
দেশের স্থিতিশীলতার জন্য ঐক্যের আহ্বান
ড. ইউনূস বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।” তিনি আরও জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
সংস্কারের গুরুত্ব
ড. ইউনূস বৈঠকে সংস্কারের গুরুত্বের উপর বিশেষ জোর দেন। তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, বিচার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা হবে। এছাড়া, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
নির্বাচনের প্রতি আস্থা অর্জন
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সংস্কার প্রক্রিয়া সফল হলে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, “নির্বাচন শুধু একটি প্রক্রিয়া নয়, এটি জনগণের অধিকার। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে এই নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।” তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা তাদের সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তারা সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
উপসংহার
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন এবং জনগণের আস্থার উপর ভর করে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।