আঞ্চলিক

বিদেশে চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ ডলার নেওয়া যাবে

বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে এখন থেকে বাংলাদেশি নাগরিকরা আরও বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত নিতে পারবেন, যা পূর্বে ছিল ১০ হাজার ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

সোমবার (১২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক চিকিৎসা খরচ এবং রোগীদের প্রয়োজন বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, এই অর্থ সরাসরি বিদেশি হাসপাতালের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো যাবে অথবা আন্তর্জাতিক প্রিপেইড, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ করা যাবে।

নগদ বহনের সীমা

যদিও ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তবে এর মধ্যে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত নগদ (নোট আকারে) বহন করতে পারবেন। বাকি অর্থ অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেল বা বৈধ পদ্ধতিতে খরচ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন বিদেশি হাসপাতালের চিঠি, চিকিৎসকের সুপারিশপত্র এবং অনুমোদিত এজেন্সির রেফারেন্সপত্র যথাযথভাবে উপস্থাপন করে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা যাবে।

পূর্বের নিয়মাবলী বহাল থাকবে

নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ববর্তী নিয়ম ও নীতিমালা বহাল থাকবে। অর্থাৎ, বিদেশে চিকিৎসার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অন্যান্য শর্ত ও অনুমোদন প্রক্রিয়া কার্যকর থাকবে।

তবে এই সিদ্ধান্তে এখন থেকে রোগীদের আলাদা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে না। নির্ধারিত ব্যাংকগুলো থেকে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ডলার সংগ্রহ করা যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অর্থনীতি ও চিকিৎসা সেক্টরের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী বলেই মনে করছেন। বিশেষ করে ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশে ভিসা প্রাপ্তির জটিলতা এবং নানা বিধিনিষেধের কারণে এখন অনেক রোগী অন্যান্য দেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন— যেমন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এসব দেশের চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ডলারের সীমা বৃদ্ধি রোগীদের জন্য কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আসিফ ইমতিয়াজ বলেন, “চিকিৎসার মতো জরুরি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার সীমা বাড়ানো একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। এটি মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়ক হবে এবং একইসঙ্গে বৈধভাবে বিদেশে টাকা পাঠানোর সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।”

ডলারের ব্যবহার ও প্রক্রিয়া

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, রোগী নিজেই কিংবা তার পরিবারের সদস্য কেউ চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলে নির্ধারিত সীমার মধ্যে ডলার ব্যবহার করতে পারবেন। প্রয়োজনে হাসপাতালে অগ্রিম পরিশোধ, চিকিৎসা বিল কিংবা থাকার খরচ হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে।

বর্তমানে অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক সরাসরি অনলাইনে চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ গ্রহণ করে, সেই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য এটি আরও সহজ হবে।

ব্যাংকগুলোর ভূমিকা

বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন চিকিৎসার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহায়তা করে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর যথাযথ অনুমোদন প্রদান করে। রোগীদের হয়রানি না করে যথাসময়ে সেবা দেওয়ার জন্যও ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ব্যাংক কর্মকর্তারাও মনে করছেন, এই নির্দেশনার ফলে গ্রাহকদের অনেক সুবিধা হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ কিছুটা কমবে।

গ্রাহকদের করণীয়

বিদেশে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকদের উচিত চিকিৎসার প্রমাণস্বরূপ প্রয়োজনীয় দলিলাদি যথাযথভাবে প্রস্তুত রাখা এবং নির্ধারিত ব্যাংকে আবেদন করা। ব্যাংক যাচাই-বাছাই শেষে নির্ধারিত ডলার সরবরাহ করবে।

সারসংক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া রোগী ও তাদের পরিবার এখন কিছুটা স্বস্তি পাবে। বিশেষ করে যারা তুলনামূলক ব্যয়বহুল দেশে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। এতে করে সময়, প্রক্রিয়া ও খরচ— তিনটি ক্ষেত্রেই সহজতা আসবে।

এ ধরনের মানবিক এবং বাস্তবতাসম্মত সিদ্ধান্ত দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রশংসার দাবিদার।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button