আঞ্চলিক

বাংলাদেশ এআই সামিট শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আগামী বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে ‘বাংলাদেশ এআই সামিট ২০২৫’। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে এবং ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এই সম্মেলন দেশের প্রযুক্তি খাতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এআই প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবন, এবং সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি সম্মেলনে এআই হ্যাকাথনের বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হবে।

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, সরকারি-বেসরকারি-একাডেমিক অংশীদারত্ব জোরদার করা, এবং জাতীয় এআই নীতিমালা প্রণয়নে কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদান করা। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। এছাড়া, দেশ-বিদেশের ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, এআই বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক, এবং উদ্ভাবকেরা বিভিন্ন সেশনে অংশ নেবেন।

সম্মেলনের লক্ষ্য ও তাৎপর্য

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমান বিশ্বে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, এবং প্রশাসনের মতো বিভিন্ন খাতে এআই প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফুল ইসলাম বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের চারপাশের বিশ্বকে প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে। এই পরিবর্তনের অংশ হতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিল্প প্রতিটি খাতে এআইয়ের যথাযথ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করব কীভাবে এআই আমাদের শিল্পকে রূপান্তর ও মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পারে।”

বাংলাদেশে এআই প্রযুক্তির প্রয়োগ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এআই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সম্মেলনটি এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট খাতে দক্ষতা উন্নয়ন এবং নীতিমালা প্রণয়নে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এআই হ্যাকাথন ও উদ্ভাবন প্রদর্শন

সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে এআই হ্যাকাথন। গত মার্চে অনুষ্ঠিত এই হ্যাকাথনে অংশ নিয়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবক ও তরুণ প্রযুক্তিবিদরা। সম্মেলনে এই হ্যাকাথনের সেরা ৩১টি দল তাদের উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো প্রদর্শন করবে। বিচারকদের মূল্যায়নের মাধ্যমে ছয়টি দলকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হবে, এবং প্রতিটি বিজয়ী দল পাবে এক লাখ টাকার পুরস্কার।

এই হ্যাকাথনের মাধ্যমে তরুণ উদ্ভাবকরা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের উদ্ভাবনী উপায় প্রদর্শন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি খাতে ফসলের রোগ শনাক্তকরণ, স্বাস্থ্য খাতে রোগ নির্ণয়ের জন্য এআই-ভিত্তিক সরঞ্জাম, এবং শিক্ষা খাতে ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এই উদ্ভাবনগুলো বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এই সম্মেলনের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত স্থায়ী ক্যাম্পাসে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ২০০১ সালে স্যার ফজলে হাসান আবেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি তার উদার শিল্প শিক্ষা পদ্ধতি এবং গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সুপরিচিত। এআই সামিটের মতো আয়োজনের মাধ্যমে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করছে।

ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহযোগিতায় এই সম্মেলনটি আরও গতিশীল হয়ে উঠেছে। বিজনেস স্কুলের শিক্ষক ও গবেষকরা এআই প্রযুক্তির ব্যবসায়িক প্রয়োগ এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্মেলনে তাদের এই গবেষণার ফলাফল এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শিত হবে।

এআই নীতিমালা ও সরকারের ভূমিকা

বাংলাদেশে এআই প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন। সম্মেলনে জাতীয় এআই নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা অন্যতম প্রধান বিষয় হবে। সরকারের আইসিটি বিভাগ এই বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “এআই প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে। তবে, এর নৈতিক ব্যবহার এবং সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে আমাদের এই প্রযুক্তির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।”

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনটি এই তিনটি পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

এআইয়ের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

এআই প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি খাতে এআই-ভিত্তিক সরঞ্জাম ফসলের উৎপাদন বাড়াতে এবং কৃষকদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ করতে পারে। স্বাস্থ্য খাতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় এআইয়ের প্রয়োগ জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। শিক্ষা খাতে ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন সম্ভব।

তবে, এআই প্রযুক্তির প্রয়োগে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। গোপনীয়তা, তথ্য নিরাপত্তা, এবং নৈতিক ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া, এআই প্রযুক্তির জন্য দক্ষ জনশক্তির অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সম্মেলনে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button