রাজনীতিতে ধর্ম আনা হলে তা কলুষিত হয়

রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার ধর্মকে কলুষিত করে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, দেশে নিবন্ধিত প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র ও জাতি গঠনে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। শনিবার (৩ মে) বিকেলে জনতা পার্টি বাংলাদেশের আয়োজনে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আবুল কাশেম ফজলুল হক আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বা সরকার অনির্বাচিত। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় এ ধরনের সরকারের উত্থান ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো—আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এবং জাতীয় পার্টি—তাদের রাজনৈতিক দর্শন ও লক্ষ্য হারিয়ে ফেলেছে। এর ফলে, তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য।
রাজনীতি ও ধর্মের সম্পর্ক
আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর বক্তব্যে রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ধর্ম মানুষের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জীবনের একটি পবিত্র অংশ। কিন্তু যখন এটি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তখন ধর্মের মূল মর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ধর্মকে প্রায়ই ভোট প্রাপ্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের অপব্যবহার শুধু ধর্মের পবিত্রতাই নষ্ট করে না, বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও বিঘ্নিত করে। তাঁর মতে, রাজনীতির উচিত ধর্মকে সম্মান করা এবং এটিকে রাজনৈতিক স্বার্থের উর্ধ্বে রাখা।
রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা
আবুল কাশেম ফজলুল হক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নিবন্ধিত ৫০টি রাজনৈতিক দল থাকলেও তাদের মধ্যে অধিকাংশই জাতি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। তিনি উল্লেখ করেন, এই দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতৃত্বের সংকট, এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব স্পষ্ট।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এবং জাতীয় পার্টির কথা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এই দলগুলো ক্ষমতার রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকায় জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।
বিদেশি প্রভাব
আলোচনা সভায় আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তিনি মনে করেন, এই হস্তক্ষেপ দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি শক্তির এই প্রভাব কমাতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সংগঠিত ও দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের রাজনীতি দেশীয় নেতৃত্বের হাতে থাকা উচিত, যারা জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।
শ্রমিক কল্যাণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব
শ্রমিক দিবসের প্রেক্ষাপটে আবুল কাশেম ফজলুল হক শ্রমিকদের কল্যাণ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু তাদের ন্যায্য অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে শ্রমিকদের অনেক সমস্যা, যেমন নিম্ন মজুরি, অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, এবং নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাবে সমাধান হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে শ্রমিকদের জন্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
উপসংহার
আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন এবং সমাধানের পথ নির্দেশ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। তিনি ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ, বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ, এবং শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তাঁর এই বক্তব্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, শ্রমিক সমাজ, এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজের ভবিষ্যৎ গঠনে তাঁর এই পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।