আঞ্চলিক

পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ

বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল ২০২৫) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এই ক্রয়ের উদ্দেশ্য হলো দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ক্রয়ের প্রেক্ষাপট

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রস্তাবনায় বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান এবং তৎপরবর্তী ঘটনাবলির কারণে বাংলাদেশ পুলিশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৪৬০টি থানা এবং অন্যান্য পুলিশি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের বিপুল সংখ্যক যানবাহন ভস্মীভূত বা মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ দেশের জাতীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও আইন প্রয়োগকারী প্রধান বাহিনী হিসেবে কাজ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এই বাহিনী চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রতিরোধসহ বিভিন্ন জনসভা ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে থাকে। গত এক দশকে জঙ্গিবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ উল্লেখযোগ্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের কারণে পুলিশের যানবাহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় তাদের অপারেশনাল সক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন যানবাহন ক্রয়ের প্রস্তাবটি গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রয় পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তি

প্রস্তাবিত ক্রয়টি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬-এর ধারা ৬৮ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৭৬-১(ছ) ও ৭৬-(২) অনুসরণ করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হবে। এই ক্রয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। জরুরি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন বিবেচনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে এই ক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি সাধারণত জরুরি প্রয়োজনে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না। এই ক্ষেত্রে, গণঅভ্যুত্থানের কারণে সৃষ্ট জরুরি পরিস্থিতি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড রাষ>}ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এই ক্রয় প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর্থিক দিক

প্রতিটি ডাবল কেবিন পিকআপের মূল্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি পিকআপের দাম প্রায় ৮৬ লাখ টাকা হতে পারে। এই হিসেবে ২০০টি পিকআপ ক্রয়ে মোট ব্যয় হতে পারে ১৭২ কোটি টাকা। নীতিগত অনুমোদনের পর দরদাম চূড়ান্ত করা হবে এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে যে, সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার এবং স্বচ্ছতা বজায় থাকে।

এই ব্যয় সরকারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক প্রতিশ্রুতি হলেও, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রম পুনরুদ্ধার এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই বিনিয়োগ সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয়।

পুলিশের ভূমিকা এবং প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশ পুলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এই বাহিনী দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা এবং অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বিশেষ করে, জঙ্গি দমন, শিল্প এলাকায় শ্রম অসন্তোষ প্রতিরোধ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষ ইউনিটগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

ডাবল কেবিন পিকআপগুলো মূলত ফিল্ড পর্যায়ে অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হবে। এগুলো সাধারণত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) এবং নিম্ন পদবির কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। এই যানবাহনগুলো পুলিশের গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াবে।

সম্ভাব্য প্রভাব

নতুন যানবাহন ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল সক্ষমতা পুনরুদ্ধার হবে, যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে সহায়ক হবে। সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের কার্যক্রমে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

তবে, এই ক্রয় প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং আর্থিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ক্রয়ে অতীতে কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাই এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button