খুলনায় ঘুষ নেওয়ার দায়ে এসআইয়ের সাত বছরের কারাদণ্ড

খুলনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় পুলিশের এক সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলমকে দুটি ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে সাত হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে; জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আজ রোববার দুপুরে খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলার পটভূমি
মো. শাহ আলম সর্বশেষ খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) খালিশপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
আদালতের রায়
খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. ইয়াসিন আলী জানান, ঘুষ নেওয়ার দায়ে শাহ আলমের তিন বছরের কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে চার বছরের কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
২০১২ সালে ৯ বছরের এক শিশুকে নিখোঁজের ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে মাসুদ হাসান, মোহাম্মদ আলী খোন্দকার ও মাসুদ শেখকে আসামি করে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তদন্ত করতে গিয়ে তৎকালীন এসআই শাহ আলম ওই পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না পেয়ে তিনি নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘হত্যা নাটক’ সাজান।
পরবর্তীতে ডুমুরিয়া উপজেলার লাইন বিল পাবলার একটি খাল থেকে বস্তাবন্দী ২৮-৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাতপরিচয়ের এক নারীর লাশকে নিখোঁজ শিশুর হিসেবে বর্ণনা করে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালান শাহ আলম। ওই ঘটনায় মাসুদ হাসান ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয়। পরে নিখোঁজ শিশুটিকে অন্য একটি জায়গা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলা ও রায়
ঘুষ না দেওয়ার কারণে শিশু হত্যার নাটক ও জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের খুলনার উপসহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট শাহ আলমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। মামলার মোট ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত রায় ঘোষণা করেছেন।
এই রায় পুলিশের দুর্নীতি ও ঘুষের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াবে।