আঞ্চলিক

‘আমিও একজন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’, জামায়াত নেতা

Advertisement

চাঁদপুর মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর বিল্লাল হোসেন মিয়াজী দাবি করেছেন, “আমাদের বাঁকা চোখে দেখবেন না। কারণ আমিও একজন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম।” সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে তিনি এই মন্তব্য করেন। জামায়াত আমীর বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি ক্লাস ফোরে পড়তেন এবং ছোট বয়সে মুক্তিযোদ্ধাদের চাল-ডাল সংগ্রহ করেখাবার পৌঁছে দিয়ে সহায়তা করতেন। তাঁর এই বক্তব্য স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আনুগত্য এবং ঐতিহাসিক বিতর্কের দিকটি সামনে এনেছে।

জামায়াত আমীরের দাবি: সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা

চাঁদপুর মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে বিল্লাল হোসেন মিয়াজীর এই মন্তব্য উপস্থিত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি ১৯৭১ সালে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিল্লাল হোসেন মিয়াজী ক্লাস ফোরে পড়তেন।

তিনি দাবি করেন, “আমিসহ আমাদের এলাকার ছোট ছেলেরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাল-ডাল সংগ্রহ করে এনে দিতাম। তাদের খাবার পৌঁছে দিতাম।” এই সহায়তার ভিত্তিতেই তিনি নিজেকে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করেন।

এই দাবির মধ্য দিয়ে জামায়াত নেতা একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরছেন, অন্যদিকে তেমনি স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও তাঁদেরকে বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন।

চাঁদপুর মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠান

চাঁদপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়।

শোভাযাত্রা: শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’-এর পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন: পরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন শহীদ স্মৃতি ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

উপস্থিতি: অনুষ্ঠানে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল ইসলাম সরকারসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীরের এই ধরনের সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং পুষ্পস্তবক অর্পণের ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণ করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বিতর্কের কারণ

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দলটির ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। এই কারণে, জামায়াতের কোনো নেতার ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি করা রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বিতর্কের সৃষ্টি করে।

ঐতিহাসিক বিতর্ক: জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

বাঁকা চোখে দেখার অভিযোগ: বিল্লাল হোসেন মিয়াজীর “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আমাদের বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে”—এই অভিযোগটি মূলত জামায়াত কর্মীদের প্রতি সমাজের এবং রাজনৈতিক মহলের দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও বিতৃষ্ণার প্রতি ইঙ্গিত করে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

জামায়াত নেতার এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।

রাজনৈতিক কৌশল: বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত এখন ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করার কৌশল হিসেবে এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে। বিশেষ করে যখন দেশে নতুন করে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে, তখন জামায়াত তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

বিএনপির অবস্থান: এই অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপিরও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা গেছে, যা জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে আরও একবার সামনে এনেছে।

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি: সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের দাবিকে কীভাবে দেখা হয়, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার বরাবরই জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার জন্য কঠোর সমালোচক।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতা

চাঁদপুরে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর বিল্লাল হোসেন মিয়াজীর ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে নিজেকে দাবি করা এবং বাঁকা চোখে দেখার অভিযোগ আনা—এই সবই দেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে চলমান বিতর্কের একটি অংশ। যদিও জামায়াত নেতারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন, তবে তাঁদের দলের অতীত কর্মকা্লের কারণে এই ধরনের দাবি 

এম আর এম – ২৫৪৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button