বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর সঙ্গে ধাক্কা, যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৮

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষে আটজন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একটি চায়ের দোকানে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সংঘর্ষের কারণ
জানা গেছে, চায়ের দোকানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকা শাহানীর সঙ্গে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী স্বপনের ধাক্কা লাগে। স্বপন এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর সাদেকার বন্ধুরা সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। এই ঘটনার পর সিএসই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী সাদেকার বন্ধু ও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিব আহমেদকে ডেকে নেন। সাদেকা তখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের কল করে ঘটনাস্থলে জড়ো করেন। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
আহতদের অবস্থা
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আটজন আহত হন। তাদের মধ্যে চারজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ হোসেন উচ্চ রক্তচাপে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত দুইটার পর ক্যাম্পাস শান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ হোসেন বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন বা সমাবেশ করা যাবে না। যদি কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আজ শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
পূর্ববর্তী ঘটনার প্রেক্ষাপট
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল কবির ও সিএসই বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. গালিবকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অধ্যাপক গালিবের বরখাস্ত আদেশকে অবৈধ দাবি করে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাদের ধারণা, গালিবের বরখাস্তের পেছনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইন্ধন রয়েছে।
প্রক্টরের মন্তব্য
প্রক্টর আমজাদ হোসেন বলেন, “আমার ধারণা, এই সংঘর্ষের নেপথ্যে গালিবের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি থাকতে পারে। তা না হলে শুধু চায়ের দোকানে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তুচ্ছ কথা-কাটাকাটির ঘটনায় ক্যাম্পাসে এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার কথা নয়।”
পুলিশি তদন্ত
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সঠিক কারণ বের করা হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন