আঞ্চলিক

হাসিনার পক্ষে আদালতে লড়বেন না জেড আই খান পান্না: আদালতের প্রতি আস্থাহীনতা মূল কারণ

Advertisement

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তার পক্ষে আদালতে আইনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এই চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্তের কথা জানান।

আইনজীবী পান্না এই সিদ্ধান্তের পেছনে আদালতের প্রতি শেখ হাসিনার আস্থাহীনতাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার ভিডিও বার্তায় সুস্পষ্টভাবে বলেন, ‘যে আদালতের ওপর শেখ হাসিনার আস্থা নেই, সেই আদালতে আমি তার পক্ষে লড়াই করব না।’ পান্নার এই আকস্মিক ঘোষণা দেশের আইনি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও জানান, রাষ্ট্র তাকে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি এখনো সেই সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাননি। চিঠি হাতে পেলেই তিনি আনুষ্ঠানিক উপায়ে কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগের বিষয়টি জানাবেন।

আইনজীবীর সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ

জেড আই খান পান্না কেন তার আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব থেকে সরে আসছেন, তার নিজস্ব ব্যাখ্যা।

আস্থাহীনতা: আইনজীবী পান্নার ঘোষণার মূল ভিত্তি হলো আদালতের প্রতি শেখ হাসিনার আস্থাহীনতা। তিনি মনে করেন, যার পক্ষে লড়ছেন, সেই মক্কেলের যদি বিচার ব্যবস্থার ওপরই বিশ্বাস না থাকে, তবে সেই লড়াইয়ের কোনো অর্থ হয় না।

সরাসরি বক্তব্য: তিনি তার ভিডিও বার্তায় এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেন। পান্নার এমন সরাসরি বক্তব্য তার নীতি ও পেশাদারিত্বের প্রতি তার দৃঢ় অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা: তিনি জানান, রাষ্ট্র তাকে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানালেও, তিনি আনুষ্ঠানিক চিঠি হাতে পাননি। চিঠি হাতে পাওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিক উপায়ে পদত্যাগপত্র দাখিল করবেন।

স্বেচ্ছামূলক সিদ্ধান্ত: পান্নার এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ স্বেচ্ছামূলক এবং এটি তার ব্যক্তিগত নীতি ও মূল্যবোধের প্রতিফলন।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনা

যে মামলাকে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্তের জন্ম, তার সংক্ষিপ্ত পটভূমি।

মামলার প্রকৃতি: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা

রায় ঘোষণা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি এই মামলায় রায় ঘোষণা করেছে। রায়ে শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অন্যান্য দণ্ডিত: এই একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনি লড়াইয়ের গুরুত্ব: এই মামলায় আইনি লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল, কারণ এটি দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সম্পর্কিত।

অন্যান্য মামলায় পান্নার অবস্থান

শেখ হাসিনার মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেও, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয়ে জেড আই খান পান্নার ভূমিকা কী।

অন্যান্য মামলায় অঙ্গীকার: শেখ হাসিনার মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেও, জেড আই খান পান্না অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আইনি সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

ফজলুর রহমানের মামলা: তিনি জানান, সম্প্রতি তার বন্ধু অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে যে মামলা হয়েছে, সেই মামলায় তিনি তার পক্ষে লড়বেন।

জয় ও পুতুলের মামলা: এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পক্ষে আইনি লড়াই করার বিষয়েও তিনি তার ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দেন

পেশাদারিত্বের মানদণ্ড: পান্নার এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, তার আইনি লড়াইয়ের নির্বাচন তার রাজনৈতিক মতাদর্শের চেয়েও পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার ওপর বেশি নির্ভরশীল।

আইনি ও রাজনৈতিক প্রভাব

জেড আই খান পান্নার এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের আইনি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রভাব পড়তে পারে।

আইনি দলের পরিবর্তন: শেখ হাসিনার পক্ষে লড়ার জন্য নতুন করে আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। এতে তার আইনি দলের কাঠামো এবং কৌশলগত পরিবর্তন আসতে পারে।

আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন: একজন প্রখ্যাত আইনজীবীর এমন বক্তব্য দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা এবং আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

রাজনৈতিক সমালোচনা: এই ঘোষণাটি নিঃসন্দেহে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের জন্য সমালোচনার নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

আইনজীবীদের পেশাদারিত্ব: পান্নার এই পদক্ষেপ দেশের অন্যান্য আইনজীবীদের পেশাদারিত্ব এবং মক্কেলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে ভাবাতে পারে।

জেড আই খান পান্না (কোট): “যে আদালতের ওপর শেখ হাসিনার আস্থা নেই, সেই আদালতে আমি তার পক্ষে লড়াই করব না। আমি এই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানালাম।”

আস্থাহীনতার রাজনীতি

আদালতের প্রতি আস্থাহীনতার বিষয়টি কেন এত গুরুত্ব বহন করে এবং এর রাজনৈতিক তাৎপর্য কী।

আস্থার সংকট: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদালতের রায় নিয়ে আস্থা ও অনাস্থার সংকট নতুন নয়। তবে একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী যখন মক্কেলের পক্ষ হয়ে এমন ঘোষণা দেন, তখন তা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে।

বিচার বিভাগের সম্মান: বিচার বিভাগের সম্মান ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অপরিহার্য। পান্নার বক্তব্য দেশের বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতার ওপর প্রশ্ন তুলতে পারে।

সংবিধানের প্রতি আনুগত্য: একজন আইনজীবী হিসেবে পান্নার সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রশ্নাতীত। তার এই সিদ্ধান্ত মূলত শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নৈতিক অবস্থান থেকে নেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যৎ আইনি কৌশল: শেখ হাসিনার আইনি দল এখন কী কৌশল নেয়, এবং নতুন আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়া কেমন হয়, তা মামলার ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে।

এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নৈতিক অবস্থান

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আইনি লড়াই থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি নীতি ও পেশাদারিত্বের এক বিরল দৃষ্টান্ত। তার এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ—আদালতের প্রতি শেখ হাসিনার আস্থাহীনতা—দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

পান্নার এই সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যক্তিগত সুবিধার চেয়ে নৈতিক ও পেশাদার অবস্থানকে বেশি গুরুত্ব দেন। এই ঘটনাটি দেশের আইনি অঙ্গনে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মামলায় তার অংশগ্রহণ তার পেশাদার অঙ্গীকারের কথাই পুনর্ব্যক্ত করে। শেখ হাসিনার আইনি লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ এখন তার নতুন আইনি দলের ওপর নির্ভরশীল।

এম আর এম – ২৩৯৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button