জাতীয় গ্রিড লাইনের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আগামী দুই দিন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা ও এর পার্শ্ববর্তী নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় দৈনিক টানা ৯ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। আগামী ২৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) এবং ২৯ নভেম্বর (শনিবার) এই দুই দিন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কালীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আক্তার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার স্বার্থে গ্রাহকদের এই সাময়িক অসুবিধা মেনে নিতে হবে। এই জন্য কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং নির্ধারিত দুই দিনে সবার সহযোগিতা কামনা করেছে। এই বিরতির কারণে কালীগঞ্জ, সেভেন রিংস এবং জাংগালিয়া এলাকার গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হবেন।
বিস্তারিত তথ্য ও কারণ
কবে, কখন এবং কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে—কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য।
বন্ধের তারিখ: বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে ২৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) এবং ২৯ নভেম্বর (শনিবার)।
সময়ের পরিধি: এই দুই দিন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অর্থাৎ টানা ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
কর্তৃপক্ষের ঘোষণা: এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কালীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আক্তার হোসেন।
মূল কারণ: এই সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার প্রধান কারণ হলো জাতীয় গ্রিড লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ। এটি একটি জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
যেসব এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে
ঘোষিত সূচি অনুযায়ী কালীগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী কোন কোন এলাকার গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
প্রধান এলাকা: জাতীয় গ্রিড লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রধানত কালীগঞ্জ উপজেলা এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে।
নির্দিষ্ট ফিডার: কালীগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এমন বেশ কয়েকটি ফিডার এই সময়ে বন্ধ থাকবে।
বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল: বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে কালীগঞ্জ, সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকা এবং জাংগালিয়া এলাকায়।
প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি: এই এলাকার গ্রাহকদের নির্ধারিত সময়সূচি মাথায় রেখে তাদের দৈনন্দিন কাজ এবং জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
বিদ্যুৎ বন্ধের মূল উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
কেন এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা অপরিহার্য এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী।
নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতকরণ: পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য হলো এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করা।
গ্রিড লাইনের স্থায়িত্ব: জাতীয় গ্রিড লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজটি বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য। ত্রুটিপূর্ণ লাইনে কাজ না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধ: সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করলে গ্রিড লাইনে ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ব্ল্যাকআউট বা বিতরণ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। এই সাময়িক অসুবিধা বড় দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয়।
পাওয়ার সিস্টেমে চাপ হ্রাস: শীতের আগে রক্ষণাবেক্ষণ কাজটি সম্পন্ন করলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও সিস্টেমের ওপর চাপ কমবে।
গ্রাহকদের ভোগান্তি লাঘবে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ
বিদ্যুৎ না থাকার সময় গ্রাহকদের কষ্ট কমাতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিকল্প ফিডার সচল রাখা: গ্রাহকদের ভোগান্তি কিছুটা কমাতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কালীগঞ্জ উপজেলা, কালীগঞ্জ থানা এলাকা এবং প্রোপার ফিডার বিকল্পভাবে সচল রাখার ব্যবস্থা করবে। এর মাধ্যমে জরুরি কিছু সেবা চালু রাখা সম্ভব হবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের যেকোনো সমস্যা বা তথ্যের জন্য কালীগঞ্জ জোনাল অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
দুঃখ প্রকাশ ও সহযোগিতা কামনা: নির্ধারিত দুই দিনে গ্রাহকদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করেছে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করা যায়।
“রক্ষণাবেক্ষণ কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা এবং ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে এই সাময়িক অসুবিধা। এই জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।” – মো. আক্তার হোসেন
জনজীবনে প্রভাব ও করণীয়
টানা দুই দিন ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবনে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এবং জনগণের করণীয়।
দৈনন্দিন জীবনের প্রভাব: ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে সাধারণ গৃহস্থালি কাজ, বিশেষ করে রান্নাবান্না, পানি সরবরাহ এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় গুরুতর প্রভাব পড়বে।
ব্যবসায়িক ক্ষতি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বিশেষ করে সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরির মতো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীরা উৎপাদনে বাধা এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবা: হাসপাতাল এবং জরুরি সেবা কেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর বা বিকল্প ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা অপরিহার্য।
জনগণের প্রস্তুতি: গ্রাহকদের উচিত নির্ধারিত তারিখগুলোতে পানির পাম্পের কাজ আগে সেরে ফেলা, ফ্রিজে থাকা খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জ দিয়ে রাখা। বিদ্যুৎবিহীন সময়ের জন্য মোমবাতি বা টর্চ লাইট প্রস্তুত রাখতে হবে।
ভবিষ্যতের জন্য সাময়িক ত্যাগ
গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুই দিন ৯ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি গ্রাহকদের জন্য সাময়িক কষ্টের হলেও, এটি ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন এবং উন্নত বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। জাতীয় গ্রিড লাইনের এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব রক্ষা করবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিকল্প ফিডার সচল রাখার মতো উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়, তবে গ্রাহকদের এই সাময়িক অসুবিধা মোকাবিলায় ব্যক্তিগত প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই দুই দিন গ্রাহকদের ধৈর্য এবং সহযোগিতা কর্তৃপক্ষের কাজ দ্রুত ও নিরাপদে শেষ করতে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলো আরও পরিকল্পিতভাবে এবং পূর্বঘোষণা দিয়ে সম্পন্ন করা উচিত, যাতে জনগণের ভোগান্তি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়।
এম আর এম – ২৩৯৪,Signalbd.com



