খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে: মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে রয়েছে। গত রোববার রাতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কেবিনে বর্তমানে চিকিৎসা চলছে। বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ফুসফুসের সংক্রমণসহ একাধিক জটিলতা নিয়ে ভর্তি হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে স্থিতিশীল আছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে। বোর্ডের চিকিৎসকরা দিনরাত পরিশ্রম করে তার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছেন।
বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা পদ্ধতি
ফুসফুসের সংক্রমণসহ অন্যান্য জটিলতা নিয়ে খালেদা জিয়ার বর্তমান চিকিৎসা ও শারীরিক স্থিতিশীলতা।
তিনি মূলত ফুসফুসের ইনফেকশন (সংক্রমণ) সহ বহু বছরের পুরনো জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার বয়স ৭৯ বছর এবং তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
বর্তমান স্থিতিশীলতা: বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, যে সমস্যা নিয়ে ম্যাডাম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, সেই জায়গাটা অর্থাৎ ফুসফুসের সংক্রমণ এখনও স্থিতিশীল আছে। চিকিৎসকরা তাকে শঙ্কামুক্ত রাখতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি বর্তমানে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
চিকিৎসকদের অঙ্গীকার: ডা. রফিকুল ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, অতীতের দুঃসময়ে অনেক বাধা সত্ত্বেও যে চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করেছিলেন, তারাই এখনও দিনরাত পরিশ্রম করে ম্যাডামের চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন।
পারিবারিক ও রাজনৈতিক সমন্বয়
লন্ডন ও ঢাকা থেকে পরিবারের সদস্যরা কীভাবে তার চিকিৎসার তদারকি করছেন।
লন্ডন থেকে তদারকি: বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান লন্ডন থেকে সার্বক্ষণিক মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
ঢাকায় উপস্থিত সদস্য: ঢাকায় ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশে রয়েছেন এবং সার্বক্ষণিক তার সেবাযত্ন নিশ্চিত করছেন।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের খোঁজখবর: বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও নিয়মিতভাবে হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছেন।
নিরাপত্তা ও সতর্কতার অনুরোধ: বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার জানানো হচ্ছে, খালেদা জিয়ার সুস্থতা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য জটিলতার পূর্বপটভূমি
দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়া যেসব স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন এবং তার সাম্প্রতিক বিদেশ সফর।
বহুবিধ অসুস্থতা: ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এই সব রোগ তার স্বাস্থ্যকে প্রতিনিয়ত দুর্বল করে দিচ্ছে।
নিয়মিত হাসপাতালে ভর্তি: জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় কিছুদিন পরপরই তাকে নানা কারণে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এটি তার দৈনন্দিন রুটিনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক লন্ডন সফর: গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে ১১৭ দিন অবস্থান শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন। এই সফর তার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছিল।
সুস্থতার গুরুত্ব: রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই তার সুস্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই তাকে এখন নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও স্থিতিশীলতা
চিকিৎসার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনের সর্বশেষ খবর।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের খবর: বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যদিও তার রাজনৈতিক কার্যক্রম বর্তমানে সীমিত, তবুও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসনসহ মোট ৩টি আসনে অংশ নেবেন বলে জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক সমন্বয়: হাসপাতালের চিকিৎসা শেষে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চিকিৎসা বিষয়ক সমন্বয়ে তাকে এখন নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা হয়েছে।
সুস্থতার ওপর গুরুত্ব: বর্তমানে তার চিকিৎসার ওপরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, তার শারীরিক সুস্থতা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।
“ম্যাডাম যে সমস্যায় (ফুসফুসের ইনফেকশন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, সেই জায়গাটা এখনও স্থিতিশীল আছে। মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে।” – ডা. রফিকুল ইসলাম
দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে থাকা তার পরিবার, দল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক খবর। তবে তার বয়স ও দীর্ঘদিনের বহুবিধ জটিল রোগ (Multi-Morbidity) বিবেচনায় তার চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও কঠিন চ্যালেঞ্জ।
দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় তত্ত্বাবধান এবং তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করছে। তার সুস্থতা শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং দেশের রাজনীতিতে এক বিশাল প্রভাব ফেলে। তাই তার চিকিৎসা যেন সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে অব্যাহত থাকে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, সেদিকে সকলেরই লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। তার সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের ওপরই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের গতিপথ অনেকটা নির্ভর করছে।
এম আর এম – ২৩৯২,Signalbd.com



