আঞ্চলিক

মামার হামলায় ভাগিনা নিহত: রামুতে জমি বিবাদ

Advertisement

কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমের দ্বীপ এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত শনিবার রাত ৭টা ৩০ মিনিটে মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ (২৮) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে মারা গেছেন। রহমতুল্লাহর মৃত্যু কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটেছে। এই ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং স্থানীয়রা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

ঘটনার বিবরণ

পরিবারের বরাতে জানা গেছে, ১৪ নভেম্বর, জুমার নামাজের পর জমি সংক্রান্ত বিরোধে রহমতুল্লাহর সাথে তার মামা নূরুল হকের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। বিরোধটি মূলত সুপারি পাড়া এলাকার জমি নিয়ে ঘনিষ্ঠ স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনার কারণে ঘটে।

একপর্যায়ে নূরুল হক তার ছেলে মনজুর আলম, নবী আলম, মনসুর এবং তার মেয়ের জামাই আব্দুর রহিমসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে রহমতুল্লাহর ওপর ধারালো দা ও লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত রহমতুল্লাহকে স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নয় দিন পর, ২৪ নভেম্বর রাত ৭টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

রহমতুল্লাহ চাকমারকুল মোয়াজ্জেমের দ্বীপ এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। তার মৃত্যু এলাকার মানুষদের মধ্যে শোক ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

পুলিশি প্রতিক্রিয়া

রামু থানার ওসি (তদন্ত) মো. ফরিদ বলেন, “মামলার বিষয়ে রামু থানায় প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আমরা আশা করি, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

পুলিশ জানায়, জমি বিরোধ এবং পারিবারিক মনোমালিন্য এমন ঘটনা ঘটার মূল কারণ। এ ধরনের সহিংসতা রোধে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

রহমতুল্লাহর মৃত্যুতে মোয়াজ্জেমের দ্বীপ এলাকা এবং আশপাশের গ্রামের মানুষদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমন হামলার কোনো স্থান নেই। তারা অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের সমাজে পরিবারের মধ্যে বিরোধ নিয়ে এমন নৃশংসতা কখনো আশা করা যায়নি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।”

পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

রামু উপজেলার অনেক এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। প্রথাগত পারিবারিক সম্পত্তি বিবাদ বা জমি দখল নিয়ে স্বজনদের মধ্যে মনোমালিন্য ঘটার ঘটনা এই এলাকায় নতুন নয়। কিন্তু এ ধরনের চরম সহিংসতা সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয়দের ধারণা, যদি প্রাথমিকভাবে পরিবারের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করা যেত, তবে হয়তো এমন ট্রাজেডি এড়ানো যেত। বর্তমানে রহমতুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

আইনি পদক্ষেপ

রামু থানার পুলিশের উদ্যোগে নিহতের মামলায় প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা, আঘাত, এবং উস্কানি দেওয়ার মতো অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবারের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও ওয়ার্ড কমিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।

সমাজে প্রভাব ও সতর্কবার্তা

এ ধরনের পারিবারিক সহিংসতা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকেই নয়, পুরো সমাজকেও শঙ্কিত করে তোলে। স্থানীয়রা মনে করেন, পরিবারের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা না হলে, সমাজে আইনশৃঙ্খলার জন্য এটি বড় হুমকি হতে পারে।

স্থানীয় শিক্ষক ও নেতা-মন্ত্রীদের মতে, সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। পারিবারিক বিরোধের ক্ষেত্রে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গ্রাম্য নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় কমিউনিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

বিশ্লেষণ

রামু উপজেলার এই ঘটনা একটি উদাহরণ হিসেবে দেখায়, কিভাবে পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধ সহিংসতার রূপ নিতে পারে। এটি সামাজিক, আইনি এবং প্রশাসনিক উদ্যোগের ঘাটতির প্রতিফলন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি, পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় সমন্বয়, এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

মোহাম্মদ রহমতুল্লাহর মৃত্যু কেবল তার পরিবারকেই নয়, পুরো রামু উপজেলাকে শোকাহত করেছে। স্থানীয়রা দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। এই ঘটনা সমাজে পারিবারিক বিরোধ মোকাবিলায় সতর্ক থাকার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে।

প্রতিটি পরিবারের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা যে, জমি বা সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যা মীমাংসা করতে দেরি করা বিপজ্জনক হতে পারে।

MAH – 13959 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button