আঞ্চলিক

বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ভুটান

Advertisement

বাংলাদেশ সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, ভুটান বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চান বলেও আশা প্রকাশ করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।

শনিবার (২২ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছানো ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোববার (২৩ নভেম্বর) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর একটি হোটেলে সাক্ষাৎ করে। এর আগে তিনি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ দেখান।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও নির্বাচন প্রসঙ্গ

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা।

বিএনপি প্রতিনিধিদল: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

নির্বাচন নিয়ে ভুটানের অবস্থান: বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করেন। তিনি আরও বলেন, যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক সেই সরকারের সঙ্গে ভুটান কাজ করবে বলে তাঁরা নিশ্চিত করেছেন। এটি ভুটানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো পক্ষ না নেওয়ার একটি কূটনৈতিক ইঙ্গিত।

অন্যান্য আলোচনা: বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন— ব্যবসা, বাণিজ্য, জ্বালানি ইত্যাদি নিয়ে কথা হয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবরও নেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।

বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা ও গেলেফু নগর

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উপর জোর দিয়েছেন এবং কিছু নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন।

নির্মাণসামগ্রী আমদানির আগ্রহ: ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠকে জানান, ভুটানের গেলেফু নগর নির্মাণে বাংলাদেশ থেকে দেশটি নির্মাণসামগ্রী আমদানি করতে চায়। গেলেফু নগরটি ভুটানের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত ও টেকসই অবকাঠামো তৈরির উদ্যোগ।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: ভুটানের সঙ্গে একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (PTA) রয়েছে। এরপরও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আশ্বাস দেন যে, আসন্ন বাংলাদেশ-ভুটান সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

অন্যান্য পণ্য আমদানি: তিনি বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, সিরামিক পণ্য, তৈরি পোশাক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানিতেও ভুটান সরকারের আগ্রহের কথা জানান।

কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দ্বিপাক্ষিক কৃতজ্ঞতা

ভুটান কুড়িগ্রামে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং দুই দেশের মধ্যেকার ঐতিহাসিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের গুরুত্ব: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ভুটানের জন্য বরাদ্দ করায় প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ভুটানের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সহজ করবে।

ঐতিহাসিক সম্পর্ক: বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভুটানের স্বীকৃতি দানের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত ভিত্তি পাবে।

পর্যটন ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা

ভুটান সরকার বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশে ভ্রমণের আহ্বান জানিয়েছে।

এসডিএফ-এ ছাড়: ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি পর্যটকদের ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পর্যটকদের জন্য যেখানে ভুটান সরকার প্রতিরাত অবস্থানের জন্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি (এসডিএফ) একশত ডলার নির্ধারণ করেছে, সেখানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটকদের জন্য তা মাত্র ১৫ ডলার।

পর্যটন বৃদ্ধির আহ্বান: তিনি বাংলাদেশের জনগণকে এই সুযোগ গ্রহণ করে ভুটান ভ্রমণে আগ্রহী করতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এটি ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ককে আরও নিবিড় করবে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে: “বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই চমৎকার। বাণিজ্য বৃদ্ধি দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে। যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক সেই সরকারের সঙ্গে কাজ করবে ভুটান।”

স্থিতিশীল সম্পর্কের বার্তা

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগের এই সফর বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট বার্তা দেয়। তাঁর মন্তব্যে একদিকে যেমন বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ দেখা যায় (বিশেষত গেলেফু নগর নির্মাণে বাংলাদেশের নির্মাণসামগ্রী আমদানির প্রস্তাব), অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও ভুটানের আগ্রহের প্রতিফলন ঘটে। বাংলাদেশের যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ভুটানের কাজ করার আগ্রহ বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা ও বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দুই দেশের জনগণের মধ্যেকার বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়।

এম আর এম – ২৩৫২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button