আঞ্চলিক

নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেপ্তার মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমী

Advertisement

কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন শরীয়াহ-ভিত্তিক নিকাহ কনসালট্যান্ট প্ল্যাটফর্ম ‘আইডিয়াল ম্যারেজ ব্যুরো’র প্রতিষ্ঠাতা মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমী। রবিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানী ঢাকার আটিবাজারের নিজ বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত পরশু অর্থাৎ শুক্রবার কাসেমীর তৃতীয় স্ত্রী পরিচয়ে তামান্না হাতুন-এর পক্ষ থেকে তাঁর মামি আন্না পারভীন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় এই গুরুতর মামলাটি দায়ের করেন। এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ধর্মীয় সমাজ এবং তাঁর পরিচালিত বিবাহ ব্যুরো প্ল্যাটফর্মে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

গ্রেপ্তার ও মামলার বিস্তারিত তথ্য

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীর গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া এবং মামলার ভিত্তি নিয়ে পুলিশ বিস্তারিত জানিয়েছে।

গ্রেপ্তারের সময় ও স্থান: মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীকে রবিবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার আটিবাজারের তাঁর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার ভিত্তি: ওসি মনিরুল হক জানান, তাঁর স্ত্রী তামান্না হাতুনকে কেন্দ্র করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হলেন তামান্নার মামি আন্না পারভীন।

আইনগত অবস্থান: গ্রেপ্তারের পর কাসেমীকে কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তাঁকে শিগগিরই আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ বা পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ায় নেওয়া হবে।

মামলার পূর্বপটভূমি: সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ

মামলা দায়েরের আগে মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর কথিত তৃতীয় স্ত্রীর পক্ষ থেকে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল।

ফেসবুকে অভিযোগ: গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে ‘তামান্না হাতুন’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কাসেমীর বিরুদ্ধে তৃতীয় স্ত্রী পরিচয়ে কিছু গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগের ধরন মূলত নারী নির্যাতনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।

জনমনে প্রতিক্রিয়া: একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং একটি শরীয়াহ-ভিত্তিক বিবাহ ব্যুরোর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসায় ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলিম সমাজ ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকেই এমন অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আবার অনেকে দ্রুত আইনি পদক্ষেপের দাবি জানান।

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীর পরিচয় ও কার্যক্রম

গ্রেপ্তারকৃত মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমী ধর্মীয় অঙ্গন ও সামাজিক উদ্যোগে বেশ পরিচিত মুখ।

‘আইডিয়াল ম্যারেজ ব্যুরো’র প্রতিষ্ঠা: তিনি শরীয়াহ ভিত্তিক আদর্শ নিকাহ (বিবাহ) ব্যুরো ও কনসালটেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘আইডিয়াল ম্যারেজ ব্যুরো’র প্রতিষ্ঠাতা। এটি বাংলাদেশে ধর্মীয় বিধান মেনে বিবাহ সম্পন্ন করতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য একটি সুপরিচিত প্ল্যাটফর্ম।

ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব: তিনি একজন মুফতি হিসেবে ধর্মীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তাঁর এই পরিচয়ের কারণে তাঁর গ্রেপ্তার সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও বেশি কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

মামলার প্রভাব

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীর গ্রেপ্তারের ঘটনা তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘আইডিয়াল ম্যারেজ ব্যুরো’র কার্যক্রম এবং ভাবমূর্তির ওপর একটি বড় আঘাত।

আইনি জটিলতা: এই প্রতিষ্ঠান বা তার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অন্য কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কি না, তা তদন্তের আওতায় আসতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে মামলাটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা নিয়েই হয়েছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া: মুফতি হিসেবে তিনি সমাজে যে বার্তা দিতেন, এই ঘটনা সেই বার্তার বিপরীত হওয়ায় ধর্মীয় নেতৃত্বের নৈতিকতা নিয়ে সমাজে একটি আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

আইনি প্রক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আদালতে সোপর্দ: পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অথবা সরাসরি আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তদন্তের গতি: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হওয়ায় পুলিশ এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করবে বলে আশা করা যায়। নির্যাতিতার অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং প্রমাণ সংগ্রহ করাই হবে পুলিশের মূল কাজ।

আইনজীবীর ভূমিকা: কাসেমীর আইনজীবীরা তাঁর পক্ষে আদালতে জামিনের আবেদন করতে পারেন এবং মামলার আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল হক: “কাসেমীর স্ত্রী তামান্না হাতুনের পক্ষ থেকে তার মামি আন্না পারভীন বাদি হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আজ রোববার বিকেল ৩টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

নৈতিকতা ও আইনের লড়াই

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীর মতো একজন প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ ও গ্রেপ্তার সমাজে নৈতিকতা ও আইনের প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। একসময় যিনি মানুষকে আদর্শ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিতেন, তাঁর বিরুদ্ধেই পারিবারিক কলহ ও নির্যাতনের অভিযোগ এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অসঙ্গতিকে সামনে এনেছে। তাঁর গ্রেপ্তার আইনি প্রক্রিয়ার একটি অংশ মাত্র। এখন মামলার পরবর্তী ধাপ এবং আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবে এই অভিযোগের সত্যতা। এই ঘটনা ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরও আইনের ঊর্ধ্বে নন এবং নৈতিক আচরণের প্রতি দায়বদ্ধ, সেই বার্তাই পুনর্বার স্মরণ করিয়ে দিল।

এম আর এম – ২৩৪৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button