বিনোদন

বিছানা-গাড়ি’ নিয়ে ভাইরাল পশ্চিমবঙ্গের নওয়াব, রাস্তায় শো করে ফেললেন যানজট!

Advertisement

একদিকে যানজট, অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই—এই দুইয়ের মাঝখানে উঠে এল একটি অদ্ভুত গাড়ির গল্প। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের রাস্তায় দেখা মিলেছে এক আশ্চর্য যানবাহনের, যাকে দেখে প্রথমে মনে হবে সেটি একটি চলন্ত বিছানা! গাড়ির মতো চারটি চাকা, স্টিয়ারিং, ব্রেক আর তার ওপর এক যুবক বসে আছেন একদম আরাম করে। বিছানার উপরে চাদর, বালিশ আর ম্যাট্রেসও রয়েছে। এই অবাক করা গাড়ির নামই দেওয়া যেতে পারে—‘বিছানা-গাড়ি’।

এমনই এক ঘটনা নিয়ে এখন তোলপাড় নেটদুনিয়া। বিছানা-গাড়ির ভিডিও পোস্ট করার পর সেটি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মিলেছে লাখ লাখ ভিউ এবং হাজারো মন্তব্য।

কে এই বিছানা-গাড়ির স্রষ্টা?

বিছানা-গাড়িটি তৈরি করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা তরুণ নওয়াব শেখ। তিনি প্রযুক্তি এবং ডিজাইনিং নিয়ে ভীষণ আগ্রহী। নওয়াবের ভাষ্যমতে, “গাড়ি তৈরি করাটা আমার স্বপ্ন ছিল। তবে সেটা একটু আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলাম। তাই এই বিছানা-গাড়ি বানিয়েছি।”

বিছানার মতো দেখতে এই যানবাহনটি বানাতে সময় লেগেছে এক বছরের বেশি, এবং এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই লাখ রুপি। এই টাকা নিজের জমানো সঞ্চয়, কিছু আত্মীয়-স্বজনের সহায়তা এবং নিজের ছোটখাটো কাজ থেকে জমিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নওয়াব।

ভিডিও দেখে সবাই হতবাক!

ভিডিওতে দেখা যায়, বিছানার ওপর হেলান দিয়ে আরাম করে বসে আছেন নওয়াব। বাঁ হাতে বালিশে মাথা ঠেকানো, আর ডান হাতে স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছেন। একসময় দাঁড়িয়ে বলিউড তারকা শাহরুখ খানের বিখ্যাত ভঙ্গিতে হাত ছড়িয়ে পোজ দিচ্ছেন। এই দৃশ্য যে কাউকে থমকে দেবে।

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা মাত্রই ভাইরাল হয়ে যায়। তার পর মুহূর্তেই সেটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্যান্য মাধ্যমে।

নেটিজেনদের মজার প্রতিক্রিয়া

এই ব্যতিক্রমী বিছানা-গাড়ি দেখে অনেকেই মজার মজার মন্তব্য করেছেন—

  • একজন লিখেছেন, “রোলস-রয়েস থেকে ৬৯টা মিসড কল এসেছে!
  • আরেকজন বলেন, “ভারত নতুনদের জন্য নয়!
  • কেউ কেউ লিখেছেন, “এমনটা কেবল ভারতেই দেখা যায়!

এ ছাড়া অনেকেই নওয়াবের সৃজনশীলতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

আইনি বাধা: গাড়িটি আটক এবং খুলে ফেলা হয়

এই সৃজনশীলতায় যেমন বাহবা মিলেছে, তেমনি এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধাও। পশ্চিমবঙ্গের রানীনগর-দমকল সড়কে বিছানা-গাড়ি নিয়ে বের হলে সেটি দেখে মানুষের ভিড় জমে। তৈরি হয় তীব্র যানজট। এ কারণে স্থানীয় পুলিশ গাড়িটি আটক করে এবং পরবর্তীতে সেটি খুলে ফেলা হয়

পুলিশের দাবি, গাড়িটির রোড পারমিট নেই, না আছে পরিবহন দপ্তরের অনুমতি। তাই এটি বৈধভাবে সড়কে চলতে পারে না।

বিছানা-গাড়ির বৈশিষ্ট্য

নওয়াব শেখ জানিয়েছেন, তাঁর গাড়িটিতে রয়েছে—

  • চারটি চাকা
  • কার্যকর ব্রেকিং সিস্টেম
  • স্টিয়ারিং হুইল
  • LED আলো
  • হর্ন
  • বিছানার নিচে মাইক্রো ব্যাটারি ও ইঞ্জিন সংযুক্তি

তিনি জানান, ইলেকট্রিক মোটর ব্যবহারের মাধ্যমে এটি পরিবেশবান্ধব করে তোলা হয়েছে। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিমি গতিতে চলতে পারে।

নওয়াবের স্বপ্ন কী?

নওয়াব শেখ বলেন, “আমি চাই মানুষ ভাবুক—যা চাওয়া যায়, সেটা করা সম্ভব। আমি দেখাতে চেয়েছি, সৃষ্টিশীলতা থামানো যায় না। আইন মেনে এই গাড়ি যদি অনুমোদন পায়, আমি চাই আরো বিছানা-গাড়ি বানিয়ে মানুষের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বদলে দিতে।”

তিনি ভবিষ্যতে একটি ইলেকট্রিক ইনোভেশন ওয়ার্কশপ গড়ে তুলতে চান, যেখানে তরুণদের উৎসাহ দেওয়া হবে উদ্ভাবনে।

এমন ঘটনা কি বাংলাদেশেও হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের সৃষ্টিশীলতা তরুণদের মাঝে উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটায়। যদিও বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রশাসনিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশেও এমন উদ্ভাবন সম্ভব।

পরিবেশবান্ধব যানবাহনের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি ক্রিয়েটিভ মোডিফিকেশন ও ফিউচারিস্টিক ডিজাইন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের মধ্যে।

সমালোচনাও আছে

যদিও অনেকে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, সমালোচনাও কম হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে—নিরাপত্তা কোথায়? সড়কে যদি এমন যানবাহন হঠাৎ ব্রেক ফেল করে, বা অন্য যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, তাহলে কি প্রাণহানির সম্ভাবনা নেই?

অনেকেই বলছেন, সৃজনশীলতা থাকা ভালো, তবে তা যেন জনসাধারণের জীবনের জন্য হুমকি না হয়।

সড়কে নিয়ম না মানার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ

বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোতে সড়কে নিরাপত্তা অনেকটাই গড়পড়তা। নিয়ম না মানা, অবৈধ যান চলাচল, অদক্ষ চালক—এসব কারণে প্রতি বছর ঘটছে হাজারো প্রাণহানির ঘটনা।

তাই সৃজনশীলতা প্রশংসনীয় হলেও, সেটি আইন মেনে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

নওয়াব শেখের বিছানা-গাড়ি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং সাহস থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। যদিও এটি এখন প্রশাসনিক বাধায় থেমে গেছে, ভবিষ্যতে হয়তো এই সৃষ্টিশীলতার মঞ্চ হবে আরও বড়। আর আমাদের তরুণ সমাজ হয়তো অনুপ্রাণিত হবে নতুন কিছু করতে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button