দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উপকূলীয় তিন বিভাগে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে আবহাওয়া অধিদফতর এ সতর্কবার্তা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত এবং কিছু কিছু স্থানে ১৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটছে
আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সক্রিয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর আর্দ্রতা নিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের আকাশে অবস্থান করছে। এই কারণে খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ভারী বর্ষণের ফলে ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পেছনের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে বর্ষাকালীন মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণ হওয়া নতুন কিছু নয়। তবে এবারের মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি। আগের বছরগুলোতেও এই সময়ে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতার ঘটনা ঘটেছে।
সম্ভাব্য প্রভাব
অতিভারী বর্ষণের কারণে উপকূলীয় জেলাগুলিতে নিম্নাঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম শহর ও পার্বত্য জেলাগুলোতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সম্ভাব্য সময়কাল
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হবে। কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই বৃষ্টিপাত ধাপে ধাপে পুরো সপ্তাহ জুড়েই অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব না থাকলেও মৌসুমি বায়ুর শক্তিশালী অবস্থান এ ধরনের ভারী বর্ষণের জন্য দায়ী। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় নদীগুলোতে পানির স্তর বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট বিভাগের কিছু অঞ্চলেও পানি বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
“দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে,”—আবহাওয়া অধিদফতর।
শেষ কথা
আবহাওয়া অধিদফতরের এ সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে। প্রশাসনকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে যেন অতিভারী বর্ষণের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেতনতা এবং প্রস্তুতিই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এম আর এম – ০৫৬৭, Signalbd.com



