যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মাকে দেখতে হাসপাতালে গেলে ছেলে পলাশ ধর হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। পরিবার ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা ঘটনাটি মর্মান্তিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যশোরে মাকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়া এক যুবক হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। পলাশ ধর (৪৫) নামের এই ব্যক্তি তার মায়ের দুর্ঘটনার খবর শুনে যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে মা সীমা ধরের রক্তাক্ত শরীর দেখে পলাশের হৃদয় বিকল হয়ে যায়। জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার বিস্তারিত
সোমবার বিকেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী কর্মচারী সীমা ধর (৬৫) সিএনজিতে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এলাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সিএনজির সংঘর্ষ ঘটে। এতে সীমা গুরুতর আহত হন এবং স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মায়ের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছেলে পলাশ ধর হাসপাতালে যান। হাসপাতালে গিয়ে তিনি মায়ের আহত অবস্থার দৃশ্য দেখেন এবং হঠাৎ মাথা ঘুরে যায়। জরুরি বিভাগের ডাক্তারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে হার্ট অ্যাটাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বলেন, “পলাশ ধর হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এটি এক গভীর মর্মান্তিক ঘটনা।”
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
পলাশ ধরের পরিবারের সদস্যরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মৃত পলাশের বাবা অজিত ধর বলেন, “আমরা এমন অঘটনের প্রত্যাশা করিনি। একসঙ্গে মায়ের সেবা করতে গিয়ে ছেলে হারিয়ে গেল। এটি আমাদের পরিবারের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
সীমা ধরের ভাই নিমাই ধর জানান, “মায়ের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পলাশ খুব দ্রুত হাসপাতালে গিয়েছিলেন। মা সুস্থ হলে তিনি সম্ভবত বাঁচতে পারতেন। আমরা সবাই শোকাহত।”
পুলিশ ও হাসপাতালের বক্তব্য
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত জানান, তারা ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা এবং পরবর্তী চিকিৎসা প্রক্রিয়া ঠিকভাবে ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার হাসিব আল হাসান জানান, পলাশ ধরকে হাসপাতালে আনা হলে অবস্থা খুবই সংকটজনক ছিল। চিকিৎসা সত্ত্বেও তার হার্ট অ্যাটাক রোধ করা সম্ভব হয়নি। ডাক্তাররা পরিবারের কাছে মর্মাহত সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি
যশোরের চুড়ামনকাটি এলাকা বিগত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য পরিচিত। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে সেখানে যানজট এবং রাস্তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল। বিশেষত বড় যানবাহন এবং ছোট যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা অতীতে ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক নিরাপত্তা এবং জরুরি সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা কমবে না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে লিখেছেন, মা-বাবার সেবা করতে গিয়ে সন্তান হারানো পরিবারটির জন্য এক ভয়াবহ ধাক্কা। অনেকেই স্বাস্থ্যসেবা এবং সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসনও এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মানসিক চাপ ও হঠাৎ হৃদরোগের ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হঠাৎ মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ হার্ট অ্যাটাকের একটি বড় কারণ। মায়ের আহত অবস্থার দৃশ্য দেখার পর পলাশের শরীরে অত্যধিক মানসিক চাপ তৈরি হয়েছিল, যা হঠাৎ হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
ডাক্তাররা পরামর্শ দেন, পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
মর্মান্তিকতা এবং সতর্কবার্তা
যশোরে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে সমাজকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে স্বাস্থ্য, মানসিক চাপ এবং সড়ক নিরাপত্তার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক। পরিবারের জন্য এটি এক অপূরণীয় ক্ষতি, যা শহরের মানুষের মধ্যে শোকের ছাপ ফেলেছে।
এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করছে, কখনো কখনো জীবনের অনিশ্চয়তা আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষের জন্যও হঠাৎ ঘটে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্ব আরোপ করা অত্যন্ত জরুরি।
এম আর এম – ২২৭৯,Signalbd.com



