আঞ্চলিক

মিরপুরে যুবদল নেতাকে হত্যার পর পালানোর সময় দ্রুত নিয়ে না যাওয়ায় রিকশাচালককেও গুলি

Advertisement

রাজধানীর মিরপুরে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার পর পালানোর সময় হেলমেট পরা দুই দুর্বৃত্ত একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় উঠে দ্রুত গতি না হওয়ায় রিকশাচালককে গুলি করে পালিয়ে যায়। আহত চালক আরিফ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকার মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে সোমবার সন্ধ্যায় মুখোশ ও হেলমেট পরা তিন দুর্বৃত্ত যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার পথে এক রিকশাচালককে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় রিকশাচালক আরিফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

দোকানে ঢুকে নির্বিচারে গুলি এবং পালানোর সময় আরেকজনকে আহত করা

সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিরপুর ১২ সি ব্লকের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে গোলাম কিবরিয়া ঢোকার মুহূর্তেই তিনজন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত দোকানে ঢুকে তাঁকে লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি চালায়। দোকানের ভেতরে থাকা লোকজন আতঙ্কে বাইরে দৌঁড়ে বের হয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা খুব কাছ থেকে অতিরিক্ত গুলি করে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত দোকান ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার কয়েক মিনিট পরই হেলমেট পরা দুই জন দৌড়ে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় উঠে দ্রুত এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করে। রিকশা চালক আরিফ জানান, দুর্বৃত্তরা কোমরে বন্দুক ঠেকিয়ে দ্রুত যাত্রার নির্দেশ দিলেও রিকশা দ্রুত গতি তুলতে না পারায় তাদের একজন পিছন থেকে তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি রিকশা থেকে পড়ে যান। পরে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহত রিকশাচালকের অভিজ্ঞতা: জীবন নিয়ে পালানোর চেষ্টা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফ জানান, তিনি মিরপুর ১১ ও ১২ নম্বর সেকশনের মাঝামাঝি এলাকায় যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক তখনই দুই যুবক দৌড়ে এসে তার রিকশায় উঠে ভীতিকর ভাষায় দ্রুত এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। তিনি ভয়ে রিকশা চালু করার চেষ্টা করলেও কয়েক সেকেন্ড দেরি হওয়াতেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিটি তার পিঠের বাম পাশে লেগেছে এবং চিকিৎসার মধ্যে তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

নিহত গোলাম কিবরিয়ার পরিচয় ও রাজনৈতিক ভূমিকা

নিহত গোলাম কিবরিয়া পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনীতি ও ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর পরিচিতদের দাবি, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এবং কখনো বড় ধরনের শত্রু তৈরি করেননি।

পরিবারসূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থলের অদূরে তিনি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই মেয়ের সঙ্গে থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। স্থানীয়রা মনে করছেন, এ ধরনের পরিকল্পিত হামলার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ব্যক্তিগত বিরোধ বা চাঁদাবাজির মতো বিভিন্ন মোটিভ থাকতে পারে। তবে তদন্তের আগে কিছুই নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।

পুলিশের তদন্ত: সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও সন্দেহভাজন আটক

পল্লবী থানা পুলিশ ও ডিএমপির মিরপুর বিভাগ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ফুটেজে দেখা গেছে, দুর্বৃত্তদের মাথায় হেলমেট এবং মুখে মাস্ক থাকায় মুখ শনাক্ত করা কঠিন। তাদের একজনের পরনে পাঞ্জাবি, আরেকজন শার্ট এবং অন্য একজনের গায়ে ছিল শীতের চাদর।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল ও আশপাশের রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একজন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য বা কারা এই পরিকল্পনার সঙ্গে 

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও জনমনে উদ্বেগ

ঘটনার পর পুরো মিরপুর এলাকায় চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার সময় দোকানপাট খোলা থাকলেও গুলির শব্দে সবাই ভয়ে ছুটোছুটি শুরু করে। দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে দিনের আলোতে এমন হামলা চালিয়ে পালিয়ে যেতে পারায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন মহল এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তাঁদের মতে, এ ধরনের অপরাধবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর নজরদারি প্রয়োজন।

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি পূর্ববিরোধের জটিল প্রভাব?

বিশেষজ্ঞদের মতে, হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়েছে। হামলাকারীদের পোশাক, হেলমেট ব্যবহার, মুখোশ পরা এবং দ্রুত চিহ্ন না রেখে পালিয়ে যাওয়ার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তারা অভিজ্ঞ ও প্রস্তুত ছিল। এ ধরনের টার্গেট কিলিং সাধারণত একক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে পূর্বপরিকল্পিত বিরোধ, রাজনৈতিক প্রতিশোধ বা অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে হয়ে থাকে।

তদন্তের অগ্রগতি ও মোবাইল কল রেকর্ড, সিসিটিভি তথ্য ও আটক ব্যক্তির জিজ্ঞাসাবাদ থেকে প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে বলে আশা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় পুরো এলাকা

পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা এবং পালানোর সময় রিকশাচালককেও গুলি করার ঘটনাটি রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত চলছে, তবে হত্যার মূল কারণ ও জড়িতদের পরিচয় জানা এখন সময়ের দাবি। এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এম আর এম – ২২৭৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button