বাংলাদেশ

যেভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তাকে

Advertisement

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি অফিস ভবনে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এই ঘটনায় মোট চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। আতঙ্কিত নগরবাসী এবং বাংলাদেশি প্রবাসী সম্প্রদায় এখনো শোকসাগরে ভাসছে।

কীভাবে হামলার সূত্রপাত

গত সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউ এলাকায় ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, একটি কালো বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে নামেন এক বন্দুকধারী। গাড়ি থেকে নামার পর তিনি হাতে থাকা এম-৪ রাইফেল নিয়ে ৩৪৫ পার্ক অ্যাভ নামের ৪৪ তলা অফিস ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রবেশ করেই ভবনের লবিতে অবস্থানরত দিদারুল ইসলামের দিকে সোজা তাক করে গুলি চালান তিনি। গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে দিদারুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।

লবির ভেতরে তাণ্ডব চালান হামলাকারী

প্রথম গুলির পর পরিস্থিতি মুহূর্তেই বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। বন্দুকধারী এরপর পিলারের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করা এক নারীকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। গুলি চালাতে চালাতে তিনি লবির ভেতর দিয়ে এগিয়ে যান এবং সিকিউরিটি ডেস্কে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকেও গুলি করেন। এ সময় লবিতে উপস্থিত আরেক ব্যক্তিকেও তিনি গুলি করে হত্যা করেন।

হামলাকারীর আচরণ ছিল ঠাণ্ডা মাথার। তিনি লিফটের কাছে গিয়ে বোতাম চাপার সময়ও কাউকে ভয় দেখাননি। বরং লিফট থেকে বের হওয়া এক নারীকে চলে যেতে দেন। পরে লিফট ব্যবহার করে তিনি সরাসরি ৩৩তম তলায় যান।

৩৩ তলায় গিয়ে আত্মঘাতী হামলাকারী

৩৩ তলায় পৌঁছে আরও এক নারীকে লক্ষ্য করে গুলি করেন ওই বন্দুকধারী। এরপর তিনি নিজের বুকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও জরুরি সেবা সদস্যরা পৌঁছায়। ভবনটি সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হত্যাকাণ্ডে নিহত দিদারুল ইসলামের পরিচয়

৩৯ বছর বয়সী দিদারুল ইসলাম ছিলেন নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিঙ্কটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ২০২১ সালে তিনি এনওয়াইপিডিতে যোগ দেন। কর্তব্যনিষ্ঠা, সাহস এবং মানবিকতার জন্য তিনি সহকর্মীদের কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত ছিলেন। নিহত দিদারুলের দুই সন্তান রয়েছে এবং তার স্ত্রী বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরিবারের নতুন অতিথি আসার অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

নিউইয়র্কজুড়ে শোক এবং প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর নিউইয়র্ক শহরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মেয়র এরিক অ্যাডামস সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “এটি একটি ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ। দিদারুল ছিলেন এই শহরের গর্ব, একজন সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা।”

পুলিশ কমিশনার জেসিকা এস. টিশ জানান, “তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন। ঠাণ্ডা মাথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তাকে হিরো হিসেবে মনে রাখব।”

হামলাকারীর পরিচয় এবং অতীত

পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীর নাম শেন তামুরা, বয়স ২৭ বছর। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের বাসিন্দা। নেভাডা অঙ্গরাজ্যে তার বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তার মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে। তবে মানসিক সমস্যার কারণে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে শোকের ঢেউ

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে নেমে এসেছে গভীর শোক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহকর্মী ও প্রবাসীরা দিদারুলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পোস্ট দিচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন

এই হামলার পর আবারও উঠে এসেছে নিউইয়র্ক সিটির ভবনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্ন। ব্যস্ততম এলাকায় অবাধে অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়া এবং একের পর এক গুলি চালানোর ঘটনায় প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শহরের একাধিক উচ্চ ভবনে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার তদন্ত শেষ হলে হামলার উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এম আর এম – ০৫৯০ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button