আঞ্চলিক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা; নিহত ৪

Advertisement

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বটতলা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাম ট্রাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। গুরুতর আহত হন অন্তত ২০ জন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের বটতলা এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা ড্রাম ট্রাককে ধাক্কা দিলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানা না গেলেও ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধারকাজ চলমান রয়েছে।

বিস্তারিত

সন্ধ্যার পরপরই মহাসড়কের ওই অংশে দ্রুতগতিতে চট্টগ্রামমুখী একটি যাত্রীবাহী বাস আসছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, বাসটি একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সড়কের ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ড্রাম ট্রাকে সরাসরি ধাক্কা মারতেই বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। সংঘর্ষের তীব্রতায় ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন এবং আহত হন অন্তত ২০ জন যাত্রী।

দুর্ঘটনার শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। পরে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে মরদেহ উদ্ধার করে এবং আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ বেলাল হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় নেওয়া হয়েছে।

উদ্ধার অভিযান ও স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য

দুর্ঘটনার পর প্রায় ২০ জন আহত অবস্থায় সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মোহাম্মদ ইমরান জানান, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ১২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি যাত্রীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

চিকিৎসকরা জানান, বেশ কয়েকজনের মাথা, বুক ও পায়ে গুরুতর আঘাত রয়েছে। বাসটি যে গতিতে ট্রাককে ধাক্কা দেয়, তাতে বোঝাই যায় দুর্ঘটনার সময় যানটির গতি বেশ বেশি ছিল। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাড়তি চিকিৎসক ও নার্সও যুক্ত করা হয়।

দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গতি, অসতর্কতা এবং মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ভারী যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বটতলা এলাকায় সড়কের গঠন কিছুটা সংকীর্ণ এবং সন্ধ্যার পর ওই রুটে ভারী যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী মুমিন নামে একজন স্থানীয় জানান, বাস চালক সম্ভবত মোটরসাইকেলকে বাঁচাতে গিয়ে হঠাৎ ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রণ হারান এবং সরাসরি ট্রাকে ধাক্কা লাগে।

হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ জাকির রাব্বানী বলেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সড়কে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। বাসটি অতিরিক্ত গতি নিয়ে চলছিল কি না, কিংবা চালক অসাবধান ছিলেন কি না — সবকিছু যাচাই করা হবে।

সড়ক নিরাপত্তা ও অতীতের প্রেক্ষাপট

সীতাকুণ্ড এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান যাতায়াত করে। এই মহাসড়কে এর আগেও বেশ কয়েকবার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রাক, অবৈধ পার্কিং এবং অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতিদিনের যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সড়কের ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত সিসিটিভি মনিটরিং এবং দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা ছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানো কঠিন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ছুটে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করতে শুরু করেন। অনেকের শরীরে গুরুতর আঘাত ছিল, কেউ কেউ অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, মহাসড়কে নিয়মিত যানজট ও ভারী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবসময়ই থাকে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, মহাসড়কের এ অংশে রাতে ভারী যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। এতে দ্রুতগতির বাস বা ছোট গাড়ি প্রায়ই বিপদে পড়ে। তিনি মহাসড়কে কঠোর মনিটরিং ও ট্রাক পার্কিং নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও পরবর্তী ব্যবস্থা

দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে তদন্ত শুরু করেছে। হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, নিহতদের পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে। বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে এবং চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কিছু সময়ের জন্য একপাশ দিয়ে যান চলেছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে সব প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে যানবাহনের মালিকপক্ষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত শেষে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

সীতাকুণ্ডের এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, মহাসড়কে অতিরিক্ত গতি এবং অসতর্কতার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। নিহতদের পরিচয় এখনো না জানা গেলেও তাদের পরিবার শোকাহত হবে — আর আহতদের জীবনে ঘটবে গভীর প্রভাব। মহাসড়কে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটরিং, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং সড়কে অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। আগামী দিনগুলোতে এমন ঘটনা কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।

এম আর এম – ২২৬০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button