আঞ্চলিক

কাফনের কাপড়ে সড়কে শুয়ে রিজভীকে আটকে দিলেন নেতাকর্মীরা

Advertisement

পটুয়াখালীতে যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা রিমানুল ইসলাম রিমুর পুনর্বহালের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। এতে প্রায় আধঘণ্টা আটকে থাকে রুহুল কবির রিজভীর গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে তার আশ্বাসের পর।

পটুয়াখালীতে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গাড়ির অগ্রযাত্রা আটকে দেন যুবদলের একাংশের নেতাকর্মীরা। বহিষ্কৃত যুবদল নেতা রিমানুল ইসলাম রিমুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাতে নেতাকর্মীরা এই প্রতীকী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। প্রায় আধঘণ্টার উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার পর রিজভীর আশ্বাসে তারা রাস্তা ছাড়েন।

ঘটনা কীভাবে ঘটল

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার কাজিরহাট বাজারের কাছে রিজভীর গাড়িবহর পৌঁছালে ব্রিজের মুখে অবস্থান নেন যুবদলের একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে সড়কের ওপর শুয়ে পড়েন। কেউ দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন, আবার কেউ ব্রিজের মাঝখানে মানববেষ্টনী তৈরি করেন।
তাদের দাবি ছিল, রিমানুল ইসলাম রিমুর বহিষ্কারাদেশ দলীয়ভাবে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এই দাবিতে তারা সড়ক আটকে রাখেন এবং রিজভীর গাড়ি এগোতে না দিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।

বহিষ্কৃত নেতা রিমুকে ঘিরে উত্তেজনার পটভূমি

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রিমুকে যে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হলে জেলা যুবদল তাকে বহিষ্কার করে।
তবে রিমুর সমর্থকদের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের জন্য কাজ করছেন। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার উপস্থিতি ছিল কার্যকর। দলের কঠিন সময়ে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তারা।
বহিষ্কারের পর থেকেই তার অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। রিজভীর পটুয়াখালী সফরের খবর জানার পর তারা এই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে সড়কে নামেন।

রিজভীর সফর: মানবিক উদ্যোগে আসা, কিন্তু ঘিরে ধরল রাজনীতি

রুহুল কবির রিজভী মূলত একটি মানবিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পটুয়াখালী যান। স্থানীয় এক অসহায় পরিবারের চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তার দায়িত্ব নিতে তিনি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে যান।
তবে তার আগমনকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের একাংশ রাস্তায় অবস্থান নিলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। তারা রিজভীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে তাকে নড়ে যেতে দেয়নি। এতে ব্রিজ এলাকায় যানজট তৈরি হয়।
চাপের মুখে রিজভী গাড়ি থেকে নেমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি স্পষ্ট করে জানান, এই সফরে তিনি দলীয় কোনো বিষয় দেখতে আসেননি, কিন্তু দাবি দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে তিনি তুলে ধরবেন।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ও দাবির ব্যাখ্যা

যুবদলের আন্দোলনকারীরা বলেন, রিমু বহু বছর ধরে দলের প্রতি নিষ্ঠা দেখিয়েছেন। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে তিনি বিএনপির কর্মসূচিতে ছিলেন।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা যুবদলের কয়েকজন নেতা দাবি করেন, রিমুর নেতৃত্ব ছাড়া জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সফল হওয়ার সুযোগ থাকত না।
তারা আরও বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একজন অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতাকে সংগঠনের বাইরে রাখা ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার তাদের দীর্ঘদিনের দাবি।

পরিস্থিতি শান্ত করতে রিজভীর ভূমিকা

রিজভী现场ে উপস্থিত হয়েই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তিনি মানবিক কাজে এসেছেন এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত তার এখতিয়ারে নেই। তবে নেতাকর্মীরা যেহেতু বিষয়টি সামনে এনেছেন, তিনি দলের উচ্চ পর্যায়ে তা জানাবেন। রিমুর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তাঁর এই আশ্বাসের পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে সড়ক ফাঁকা করেন। প্রায় আধঘণ্টা স্থবির থাকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।

বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতামত

স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে যুবদলের ভেতরের একটি বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চাপা ছিল, যা এবার প্রকাশ্যে বিস্ফোরিত হলো।
তারা মনে করেন, মাঠপর্যায়ে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমে থাকলে তা নির্বাচনপূর্ব সময়ে দলের সাংগঠনিক ঐক্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতীকী আন্দোলন হিসেবে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করা বিরল ঘটনা হলেও এটি দলের প্রতি কর্মীদের গভীর আবেগকেও প্রকাশ করে।
তাদের মতে, উচ্চপর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে এমন পরিস্থিতি অন্যান্য জেলাতেও দেখা দিতে পারে।

সারসংক্ষেপ ও পরবর্তী সম্ভাবনা

মোটের ওপর, পটুয়াখালীতে রিজভীর গাড়ি আটকে রাখার ঘটনা যুবদলের একটি আভ্যন্তরীণ সংকটকেই সামনে নিয়ে এসেছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাদের দাবি স্পষ্ট করেছেন, আর রিজভীও দলের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এখন দেখার বিষয়, বহিষ্কৃত নেতা রিমুর ভাগ্যে কী সিদ্ধান্ত আসে এবং দলীয় অভিন্ন অবস্থান কীভাবে সামনে আসে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনাটি সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

এম আর এম – ২২৫৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button