ভারতের উত্তর প্রদেশে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ প্রচারাভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর স্থানীয় আলেম ও ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের প্রধান তৌকির রাজাকে পুলিশ শনিবার গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ঘটনার বিস্তারিত
শুক্রবার উত্তর প্রদেশের বারেলিতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ প্রচারাভিযানকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জুমার নামাজের পর বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও সমর্থকরা ঘনঘন রাস্তার ওপর ভিড় জমায়। বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় অন্তত ৪০ জনকে আটক করা হয় এবং ১৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
শনিবার সকালে তৌকির রাজা একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করলে তাঁর বাড়ির বাইরে সমর্থকরা জড়ো হন। জননিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কার্যক্রম ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অভিযোগ রয়েছে।
‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্কের সূত্রপাত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে। সেইদিন কানপুরে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় একটি তাবুর ওপর ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা পোস্টার ঝোলানো হয়। স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলো অভিযোগ করে যে পোস্টারটি তাদের ধর্মীয় উৎসবের পথে উসকানিমূলক উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছিল।
এরপর থেকে উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বারাণসী, উনাও, মহারাজগঞ্জ, লক্ষ্ণৌ ও কোসাম্বিতে প্রভাব পড়েছে। গুজরাট ও কর্ণাটকেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু লোক উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিক্ষোভের কারণে জনজীবন অস্থির থাকে, স্কুল-কলেজ ও বাজারে কার্যক্রম সীমিত থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। #ILoveMuhammad হ্যাশট্যাগটি টুইটারে ট্রেন্ড করে।
হিন্দু সংগঠনগুলোর অভিযোগ, পোস্টার ও উসকানিমূলক কার্যক্রম দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা। মুসলিম সম্প্রদায় দাবি করে, নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
স্থানীয় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জোরদার নজরদারি চালাচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং উসকানি ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভে অন্তত ১,৭০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসন সতর্কতার সঙ্গে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক মাধ্যমের দ্রুত বিস্তার এই ধরনের সংঘর্ষকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ধর্ম ও সম্প্রদায় বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ করা এবং জননিরাপত্তা রক্ষা করার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ভারতের উত্তর প্রদেশে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ কর্মসূচি কেন্দ্রিক উত্তেজনা চলমান। তৌকির রাজার গ্রেফতারের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা এখনও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কেমনভাবে মোড় নেবে তা স্থানীয় প্রশাসন ও সম্প্রদায় নেতাদের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ১৫৩৮,Signalbd.com



