গত সোমবার রাতে উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত দুর্ঘটনার পর এখন পর্যন্ত ৩১ জন দগ্ধ রোগীর প্রাণহানি ঘটেছে, যার অধিকাংশই শিশু। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের আগমন ঘটে।
সকাল ৯টার সময় স্থানীয় সময় অনুযায়ী, বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় উহান থার্ড হসপিটালের এক বিশেষজ্ঞ দল জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করে। তারা দগ্ধ রোগীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর ও ভারতীয় চিকিৎসক দলের সঙ্গে সমন্বিত কাজ করবেন।
বর্তমান চিকিৎসার অবস্থা ও বিশেষজ্ঞ দলের ভূমিকা
বর্তমানে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৪২ জন। তাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর এবং চিকিৎসকরা তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছেন। চীনা বিশেষজ্ঞ দল এই রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন, তাদের উন্নত বার্ন চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থতায় সহায়তা করবেন।
চিকিৎসা দলের সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাও সমন্বিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন, যা দগ্ধ রোগীদের পুনরুদ্ধারে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। দলের সদস্যরা পর্যবেক্ষণ শেষে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ ব্রিফিং করতে পারেন, যেখানে তারা চিকিৎসার অগ্রগতি ও পরবর্তী পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন।
নিরাপত্তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা জোরদার
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট এবং তার আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিমান বাহিনী কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে, যাতে চিকিৎসা কার্যক্রমে কোনো ধরণের বিঘ্ন না ঘটে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এই মুহূর্তে ব্লাড বা স্কিন ডোনারের কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া, সকল দগ্ধ রোগীর চিকিৎসার জন্য সরকার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে বলে জানা গেছে, যাতে পরিবারগুলো আর্থিক দিক থেকে চাপের মধ্যে না পড়ে।
চীনা বিশেষজ্ঞ দলের আগমনের পেছনের প্রেক্ষাপট
চীনা বিশেষজ্ঞ দল বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকায় পৌঁছায়। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অনুবিভাগের প্রধান সৈয়দা জেসমিন সুলতানা মিল্কি।
চীনের দূতাবাস জানিয়েছে, চিকিৎসা দলটি এসেছে হুবেই প্রদেশের উহান থার্ড হসপিটাল থেকে, যারা বার্ন ইনজুরি চিকিৎসায় অভিজ্ঞ। এই বিশেষজ্ঞরা তাদের দক্ষতা এবং উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন, যা বাংলাদেশের দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিমান বিধ্বস্ত দুর্ঘটনার পটভূমি
গেল সোমবার উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছাকাছি বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার ফলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং আশেপাশের মানুষ দগ্ধ হন। এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু ঘটেছে, যার বেশির ভাগই স্কুলছাত্র ও ছোট শিশুরা। এই দুর্ঘটনা দেশের জন্য একটি গভীর শোকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সারা দেশে নিরাপত্তা ও জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রশ্ন তুলেছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের প্রধান বার্ন চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে দগ্ধ রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ দলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
চীনা বিশেষজ্ঞ দলের এই আগমন বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বার্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এছাড়া এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং জরুরি অবস্থায় দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
সার্বিক মূল্যায়ন
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনার পর দ্রুত সাড়া দিয়ে চীনা বিশেষজ্ঞ দলের আগমন এবং দেশের চিকিৎসা সেবার উন্নয়নের জন্য সমন্বিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এটি শুধু আহত ও দগ্ধ রোগীদের জন্য সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিতে সহায়ক হবে না, বরং দেশের স্বাস্থ্যখাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনাও বাড়াবে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ৪২ জন রোগীর চিকিৎসা চলছে এবং তাদের সুরক্ষায় সরকার, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা একসাথে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরও শক্তিশালী করতে হবে।
কীভাবে আপনি সাহায্য করতে পারেন?
বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ব্লাড বা স্কিন ডোনারের প্রয়োজন না থাকলেও, আগামি সময়ে এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকা জরুরি। সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আপনারা নিয়মিত রক্তদান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে অবহিত থাকা উচিত।



