আঞ্চলিক

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

Advertisement

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস মোড়, কালীবাড়ি মোড়সহ ব্যস্ততম রাস্তাগুলোতে দেখা যাচ্ছে ফুটপাত ও সড়কভিত্তিক জায়গাগুলো বেশ দিন ধরেই দোকানদারদের দখলে রয়েছে। ফাস্ট–ফুড, ফলের দোকান, জুস স্টল, বস্ত্র ও স্ট্রিট ফুডের ভ্রাম্যমাণ পসরা এমন জায়গাগুলোতে স্থায়ী হয়ে উঠেছে, যেখানে চলাচল ও যানজটসহ অরাজকতা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন, এসব দোকানপাট বছরের পর বছর ফুটপাত দখল করে বসে আছে এবং আয় হয় দিনে দিনে – তবে প্রশাসনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

চাঁদাবাজি ও আয়ত্তহীন অবস্থা: কোটি টাকার হদিস

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মতে, এসব পসরা বসার ‘নেপথ্যে’ রয়েছে প্রতিদিনের সামান্য চাঁদা। একাধিক দোকান প্রবাসী ও পথচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দোকানভিত্তিক এলাকায় প্রতি দোকান থেকে দিনে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয় বলে। বছরে দশ হাজারেরও বেশি দোকানের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ গুনলে অঙ্ক তুলনায় কোটি টাকার। দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ রয়েছে যে, চাঁদাবাজি হয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পৌরসভার কর্মচারী বা আঞ্চলিক পুলিশের কিছু সাবেক পরিচিত মুখের মাধ্যমে।

এক স্থানীয় বৃদ্ধ ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা কঠোরভাবে বলি—চাঁদাবাজি না হলে প্রশাসন এতদিন কেন ব্যবস্থা নেয়নি?” প্রশ্ন ছুড়ে দেন। অন্যদিকে একটি সূত্র জানায়, রাস্তার দুই পাশে বসা দোকানগুলোকে নিয়মিত বিরতি দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়, তবে কিছু সময় পরে আবার আগের জায়গায় ফিরে বসে যায়।

প্রভাব ও গঠনমূলক ক্ষতি: ব্যবসা ও পরিবেশের অবহেলা

ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে দোকান বসার ফলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা সাধারণত তিনভাবে দেখা যায়। প্রথমত, চলাচলকারী পথচারীরা হাঁটার জায়গা নির্ধারিতভাবে পাচ্ছেন না, যা তাদের নিরাপত্তা ও সুবিধা দুটোই কমিয়ে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যানজট কয়েক গুণ বেড়ে যায়—বিশেষ করে সার্কিট হাউস মোড়, কালীবাড়ি মোড় ও সাতমাথা এলাকায় সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতে দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয়ত, অভিজাত রেস্টুরেন্ট ও প্রতিষ্ঠিত খাবার খুচরা দোকানগুলোতে লোক কমে গেছে—কারণ সাশ্রয়ী মূল্যে ফুটপাত দোকান থেকে খাবার বা সেবা মিলছে, যা বড় প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে এক অভিজাত রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, “বড় বিনিয়োগে খোলা রেস্তোরাঁগুলোর জন্য দেখা যাচ্ছে দিন দিন লোকসান বাড়ছে।”

নিয়মনীতি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ: সংশ্লিষ্টদের কী বলছে?

পৌর প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে আসলেও তাতে স্থায়ী পরিবর্তন হয়নি। Roads and Highways Department–সহ সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থা গত ফেব্রুয়ারিতে এক অভিযানে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু কর্মসূচির এফেক্ট সীমিত — দু’– তিন দিন পর দোকানিরা আবার ফিরে আসছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আগেও ফুটপাতভিত্তিক স্ট্রিট ফুড ব্যবসায় স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও সতর্কতা জানিয়েছিল।

প্রস্তাবিত সমাধান ও বিশ্লেষণ: কি হতে পারে?

নিরীক্ষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি—সেগুলো হলো:

  • ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্তকরণে নির্ধারিত জোন তৈরী, এবং দোকানদারদেরকে সেখানেই নিয়ন্ত্রণ করা।
  • পৌরসভার নিয়মিত ও স্বচ্ছ অভিযান, যেখানে দোকানভিত্তিক চাঁদাবাজি-সহ অবৈধ দখল চিহ্নিত করা হবে ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
  • ছোট ভ্রাম্যমাণ দোকানের জন্য সিফটেড লোকেশন নির্ধারণ করার পাশাপাশি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
  • বড় রেস্তোরাঁ ও দোকানপাটের সঙ্গে সমন্বয়ে কর্তৃপক্ষ যেন নিশ্চিত করে যে তারা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় অদৃশ্য না হয়ে পড়ে।

এক প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণের সঙ্কেত

বগুড়া শহরের ফুটপাত ও সড়ক দখল ও চাঁদাবাজি–এর ছবি আজ সন্দেহভাজন নয়। তবে যদি প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ একসাথে উদ্যোগ নেন—তাহলে এটি পরিণতির দিকে এগোতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো—আসলে কত দ্রুত গোটা সিস্টেমে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনা যাবে এবং কোটি টাকার অদৃশ্য চাঁদাবাজির পথ কি বন্ধ হবে?

এম আর এম – ২০৭৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button