সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাককে তাঁর নিজ বাসায় হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর তার ছেলে আসাদ আহমদকে গ্রেফতার করে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক শফিকুল হক রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, হত্যার রহস্য উদঘাটনে আসাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এর আগে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও তদন্তের সূচনা
গত শুক্রবার সকালে দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের তেলিরাই গ্রামে আবদুর রাজ্জাকের নিজ বাসার ছাদ থেকে রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পেট, বুক এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছুরিকাঘাতের গভীর চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি ২২ ইঞ্চি লম্বা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা না করার কারণে পুলিশ নিজ উদ্যোগে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই আনোয়ারুল কামাল মামলাটি নথিভুক্ত করেছেন। পুলিশের ধারণা, লাশ উদ্ধার হওয়ার আগে বাড়িতে অন্য কেউ প্রবেশ বা প্রস্থান করেনি।
পারিবারিক সূত্র ও পটভূমি
নিহত আবদুর রাজ্জাকের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে, উভয়ই বিবাহিত। সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে তিনি সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ-বণ্টন করেছেন। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতের সফরও করেছেন।
পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, নিহত রাজ্জাকের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে একটি মামলা রয়েছে। তবুও তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন।
পুলিশি তদন্ত ও সন্দেহভাজন
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর ছেলেসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে সন্দেহজনক হিসেবে রাখা হয়েছে। আসাদ আহমদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, উদ্ধার হওয়া ছুরিটি ফরেনসিক পরীক্ষা জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পরিবারের কিছু তথ্য যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
নিহত আবদুর রাজ্জাক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ড স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি, এই ধরনের ঘটনায় স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
ঘটনার বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পারিবারিক কারণে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড সামাজিকভাবে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা ও পরিবারিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রস্তুতি আরও জোরদার করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
পুলিশ এবং প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ ধরনের ঘটনা কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া জনগণকে সজাগ এবং আইন অনুসরণে সচেতন করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আদালত ও আইনগত প্রক্রিয়া
আসাদ আহমদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হলেও পুলিশ আরও অনুসন্ধানের জন্য দীর্ঘ রিমান্ডের আবেদন করতে পারে। আদালতের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ ও দ্রুত তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মামলায় মৃত ব্যক্তির পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সন্দেহজনক হিসেবে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে।
সিলেট পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছেন, এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং রাজনৈতিক ও সাধারণ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত সকল তথ্য একত্রিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পুলিশ বলেছে, এই ধরনের পারিবারিক ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এম আর এম – ২০৭১,Signalbd.com



