আঞ্চলিক

ফরিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত অন্তত ১০

Advertisement

সারাদেশের অন্যতম মুখ্য সড়ক ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে করিমপুরে দুর্ঘটনা
দুর্ঘটনার কারণ দ্রুতগতির বাস সংঘর্ষ, উদ্ধার ও চিকিৎসা কাজ চলছে
নিহত ও আহতদের পরিবারে শোকের ছায়া, ট্রাফিক সচেতনতার জরুরি আহ্বান

ফরিদপুর সংবাদদাতা:

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার করিমপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দুই যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন জন নিহত এবং কমপক্ষে দশ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পুলিশ এবং উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

২০২৫ সালের ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার করিমপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা ‘রয়েল এক্সপ্রেস’ নামে একটি আন্তঃজেলা বাস, ফরিদপুর থেকে মাগুরামুখী লোকাল বাস ‘রিক এন্টারপ্রাইজ’কে দ্রুতগতিতে সংঘর্ষ করলে ঘটনাটি ঘটে। সংঘর্ষের প্রভাবে দুই বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মারুফ হোসেন জানান, দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। নিহতরা হলেন, লোকাল বাসের যাত্রী আব্দুল মান্নান মোল্যা, যিনি শহরের উত্তর টেপাখোলা এলাকার আবুল কাশেম মোল্যার ছেলে এবং বাস চালক আজিজুল হক। নিহত তৃতীয় ব্যক্তির পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

আহতদের অবস্থা ও চিকিৎসা

দুর্ঘটনায় আহত অন্তত ১০ জনের মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে এক নারী যাত্রীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ করার চেষ্টা করছেন।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের ওই অংশে তদারকি ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গুরুত্ব ও দুর্ঘটনার প্রভাব

ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় সড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এ পথে চলাচল করে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন এবং যাত্রী পরিবহন ক্ষেত্রে এই সড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এখানে ঘটানো যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা শুধু জীবনের ক্ষতি নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দুর্ঘটনার কারণে মহাসড়কের করিমপুর এলাকায় কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত উদ্যোগে সড়কটি পুনরায় যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় মহাসড়কের যানজট সাময়িকভাবে বেড়েছে এবং যাত্রীরা ভোগান্তির সম্মুখীন হন।

দুর্ঘটনার কারণ ও নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুত্ব

এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে সাধারণত দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণের অভাব, দুর্বল ট্রাফিক আইন অনুসরণ, পথচারীদের অসতর্কতা এবং যানবাহনের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব থাকে। ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছেন, ‘রয়েল এক্সপ্রেস’ বাসটি দ্রুতগতিতে চলছিল এবং লোকাল বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় চালকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়াই দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে।

এই দুর্ঘটনা আমাদের সবাইকে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কগুলোতে যাত্রীদের সচেতন হওয়া এবং যানচালকদের নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া

নিহত আব্দুল মান্নান মোল্যার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি শহরের উত্তর টেপাখোলা এলাকার একজন পরিচিত ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। চালক আজিজুল হকের পরিবারও গভীর শোকে মাতামাতি করছে। নিহত নারী যাত্রীর পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

ফরিদপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ঘটনার খবর শুনে শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই দুর্ঘটনার কারণ শীঘ্রই খতিয়ে দেখে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সরকারি ও প্রশাসনিক উদ্যোগ

ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি মহাসড়কের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তারা দ্রুতগামী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর গুরুত্বারোপ করছেন।

সরকারি ও অ-সরকারি সংস্থা গুলোও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বিশেষ করে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা ক্যাম্পেইন এবং সড়ক পরিবহন আইন আরও কঠোর করার প্রস্তাব দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

সড়ক নিরাপত্তা: আমাদের করণীয়

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। যানবাহন চালানোর সময় অবশ্যই ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে, নিরাপদ গতি বজায় রাখতে হবে, এবং সকল যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। দুর্ঘটনা এড়াতে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করা, অ্যালকোহল সেবন করে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকা জরুরি।

সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করা। বিশেষ করে যাত্রী এবং চালকদের উচিত নিজেদের এবং অন্যদের জীবন রক্ষায় সজাগ থাকা।

সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার বাস্তব চিত্র

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে শত শত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মতো ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। গত কয়েক বছরে সরকার সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক পরিবহন আইন কঠোর করেছে, ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করেছে, এবং নিরাপদ সড়ক তৈরির কাজ ত্বরান্বিত করেছে।

তবে এখনও সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব।

ফরিদপুরের করিমপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জনের প্রাণহানি এবং কমপক্ষে ১০ জনের আহত হওয়া এ ঘটনা আমাদেরকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো সড়ক নিরাপত্তার গুরুতর চ্যালেঞ্জ। দ্রুতগতির বাস নিয়ন্ত্রণহীন হলে যে পরিণতি ঘটে তা এই দুর্ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করলো। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং নিহতদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করছি।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে আরও কঠোরভাবে কাজ করতে হবে এবং সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ জীবন—এই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button