আঞ্চলিক

বগুড়ায় ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে যুবক আহত

Advertisement

বগুড়ার গাবতলীতে ককটেল তৈরির সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন এক যুবক। রোববার দুপুরে উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইটালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত যুবক বর্তমানে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণস্থল থেকে বিস্ফোরক তৈরির আলামত উদ্ধার করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে অভিযান চলছে।

ঘটনার বিস্তারিত

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছোট ইটালী গ্রামের এক বাড়িতে হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে স্থানীয়রা ছুটে যান। সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

আহতের নাম আতাউর রহমান সেলিম (৩৫)। তিনি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, সেলিম কয়েকদিন ধরে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী মো. মুক্তার হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তারের বাড়িতেই গোপনে ককটেল তৈরির কাজ চলছিল।

গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্ফোরণের চিহ্ন ও কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। বিস্ফোরক তৈরির ঘরটি সিলগালা করা হয়েছে। আহত সেলিমকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই মুক্তার হোসেনসহ আরও দুই থেকে তিনজন ব্যক্তিকে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী সন্দেহ করছেন, ওই ঘরে দীর্ঘদিন ধরেই বিস্ফোরক তৈরির কাজ চলছিল।
একজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেছে। পরে দেখি, ঘরের ভেতর থেকে ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধ আসছে। তখনই বুঝি বড় কিছু হয়েছে।”

পুলিশি অভিযান ও তদন্তের অগ্রগতি

গাবতলী থানা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। মুক্তার হোসেন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ওসি সেরাজুল ইসলাম বলেন, “বিস্ফোরকের উদ্দেশ্য এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা সংঘাতমূলক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। এ বিষয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”

এদিকে পুলিশ ফরেনসিক টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে। তারা ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিস্ফোরণের টুকরো অংশ, তারের খণ্ড, এবং রাসায়নিক উপাদানের নমুনা।

ঘটনার পেছনের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, স্থানীয় মাদক ব্যবসা বা চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষায় বা প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয় দেখাতে এই বিস্ফোরক তৈরি করছিল। গাবতলী এলাকা অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষের জন্য পরিচিত। ফলে ককটেল তৈরির এ ধরনের ঘটনা নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

একজন পুলিশের গোপন সূত্র জানায়, “গত কয়েক সপ্তাহে এলাকায় কিছু অজানা ব্যক্তি আসা–যাওয়া করছিল। আমরা সন্দেহ করছি, তারা হয়তো এই বিস্ফোরক তৈরির সঙ্গে জড়িত।”

এলাকায় আতঙ্ক ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর ছোট ইটালী গ্রামে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে জানিয়েছেন, এমন বিপজ্জনক কাজের সঙ্গে গ্রামের কারও সম্পৃক্ততা বিশ্বাস করা কঠিন।
স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, “আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমাদের গ্রামের নাম এমন ঘটনায় আসায় সবাই হতবাক। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।”

এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আর না ঘটে, সেদিকে নজর রাখা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বিস্ফোরক তৈরি সাধারণত অপরাধচক্র বা চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দেখা যায়। তাদের মতে, স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো জরুরি।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, “বিস্ফোরক তৈরির মতো কাজ একদিনে হয় না। এর পেছনে উপকরণ, পরিকল্পনা ও নিরাপদ জায়গার প্রয়োজন। প্রশাসন যদি নজরদারি আরও শক্তিশালী করে, এ ধরনের অপরাধ আগেই রোধ করা সম্ভব।”

বর্তমানে আহত সেলিম পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ বলছে, তিনি সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো ঘটনার পেছনের নেপথ্য উদ্দেশ্য জানা হবে।
গাবতলী এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের প্রত্যাশায় রয়েছেন।

তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকা সত্ত্বেও কীভাবে গ্রামাঞ্চলে এমন বিস্ফোরক তৈরির কাজ চলতে পারে? প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন নজর সবার।

এম আর এম – ২০৪৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button