আঞ্চলিক

১৫ বছরের কিশোরকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ডুবিয়ে রাখে শাহীন: পুলিশ

Advertisement

ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার ঘাগড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া এলাকায় নিখোঁজের তিন দিন পর এক কিশোরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত কিশোর আশিক (১৫) স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়া ও সেলিনা আক্তারের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আশিককে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে রেখেছিল শাহীন (২৫) নামে এক যুবক। হত্যাকাণ্ডে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনাস্থল ও লাশ উদ্ধারের বিবরণ

রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভাটিপাড়া ভাটিঘাগড়া এলাকার শাহানারা হক ওরফে নার্গিসের মালিকানাধীন বাউন্ডারি ঘেরা জমির পুকুরে মরদেহটি ভেসে উঠতে দেখা যায়। স্থানীয়দের খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লাশটি আংশিক গলিত অবস্থায় ছিল এবং গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, হত্যাকাণ্ডের তিন দিন আগে আশিককে হত্যা করে পুকুরে ফেলে রাখা হয় যাতে লাশটি পানির নিচে ডুবে থাকে।

হত্যাকাণ্ডের পেছনের কাহিনি ও সন্দেহভাজন শাহীন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশিককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী যুবক শাহীন। এরপর থেকেই কিশোরটি নিখোঁজ ছিল। পরিবারের সদস্যরা আশিকের খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও কোনো সাড়া পাননি।
পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে শাহীন মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার বিরুদ্ধে এলাকায় চুরি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই শাহীন ও তার পরিবারের সদস্যরা গা-ঢাকা দিয়েছে।
এলাকার বাসিন্দারা ধারণা করছেন, ব্যক্তিগত বিরোধ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আশিককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হতে পারে।

পুলিশের তদন্ত ও উদ্ধার করা আলামত

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থল থেকে একটি লোহার রড ও শাবল উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সরঞ্জামগুলিই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছি শাহীনই মূল হত্যাকারী। তাকে ও তার সহযোগীদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।”
লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও এলাকায় উত্তেজনা

এই হত্যাকাণ্ডের পর ভাটিপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, কিশোর আশিক ছিল ভদ্র ও মিশুক স্বভাবের ছেলে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এমন একটি নির্মম হত্যাকাণ্ডে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
একজন প্রতিবেশী বলেন, “আশিক কারও সঙ্গে ঝামেলা করত না। শাহীন আগে থেকেই খারাপ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। আমরা পুলিশকে দ্রুত তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
অভিযোগ উঠেছে, শাহীন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চুরি ও মাদক সেবনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও স্থানীয়ভাবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা শেষ পর্যন্ত এই হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিয়েছে।

পরিবারের কান্না ও শোকাবহ পরিবেশ

নিহত আশিকের বাবা সেলিম মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলেটা কারও কোনো ক্ষতি করেনি। ওকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গেছে শাহীন। তিন দিন ধরে খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। এখন ও শুধু লাশ হয়ে ফিরল।”
মা সেলিনা আক্তারও ভেঙে পড়েছেন ছেলের মৃত্যুর খবরে। পরিবার ও আশিকের স্কুলের সহপাঠীরা শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।

পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ ও সম্ভাব্য গ্রেপ্তার অভিযান

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, শাহীন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ ইতোমধ্যে একাধিক স্থানে অভিযান শুরু করেছে। তিনি বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত। দ্রুতই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি আরও জানান, তদন্তে যদি মাদকসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কোনো কারণ বেরিয়ে আসে, সেক্ষেত্রেও আলাদাভাবে মামলা করা হবে।

এলাকাবাসীর নিরাপত্তা উদ্বেগ

এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, এলাকাটিতে নিয়মিত পুলিশ টহল না থাকায় অপরাধীরা সহজেই সুযোগ নিচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যরা পুলিশের সহযোগিতায় এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
এলাকার সাধারণ মানুষের আশা, দোষীরা দ্রুত ধরা পড়বে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন নৃশংস ঘটনা আর না ঘটে।

“আমরা আশিক হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।” — আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), ময়মনসিংহ।

ময়মনসিংহে কিশোর আশিক হত্যাকাণ্ড আবারও সমাজে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও তরুণদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের তদন্ত চলছে, তবে এলাকাবাসী দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এখন দেখার বিষয়, শাহীন ও তার সহযোগীরা কবে ধরা পড়ে এবং কীভাবে এই নির্মম ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয়।

এম আর এম – ২০৪৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button