আঞ্চলিক

বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার

Advertisement

ফেনীতে সংস্কার শেষে ফেনী জেলা কারাগার-২ পুনরায় চালু হয়েছে। শনিবার সকালবেলায় বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এই কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। নতুন কারাগার চালুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন আসামিদের থাকার সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

কারাগারের ইতিহাস ও গুরুত্ব

ফেনী-২ কারাগার দেশের প্রাচীন চারটি কারাগারের মধ্যে একটি। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৯৮ সালে জেলা কারাগারে উন্নীত হয়। পুরনো ভবনটি শত বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে পুরনো কারাগারটি কিছুটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।

নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির বর্তমান অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায়। কারাগারের ধারণক্ষমতা ১৭২ জন, যার মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী বন্দী রাখতে সক্ষম।

কারাগার চালু করার প্রক্রিয়া

কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন এবং চট্টগ্রাম থেকে ৪ জন সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ফেনী-২ কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। এ বন্দীরা কারাগারের রান্নার দায়িত্বও পালন করবেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনী-২ কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। আপাতত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে আনা হবে।

কারাগারের সুবিধা ও অবকাঠামো

ফেনী-২ কারাগারে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ সকল প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। কারাগারে ইতিমধ্যেই চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়াও বেশিরভাগ কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।

জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, “রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, বরং সংশোধনের কেন্দ্র হোক। সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে। বন্দীদের সুযোগ-সুবিধা সর্বাধিক নিশ্চিত করা হয়েছে।”

কারাগারের প্রভাব ও লক্ষ্য

ফেনী-২ কারাগারের পুনঃচালু দেশের কারাগার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এতে স্থানান্তরিত বন্দীরা নিরাপদ পরিবেশে শাস্তি ভোগ করতে পারবেন এবং পুনর্বাসনের সুযোগ পাবেন। সরকারি কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, কারাগারটি শাস্তি ও সংশোধন উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

ফেনী-২ কারাগারের চালু হওয়ায় এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া বন্দীদের জীবনমান ও নিরাপত্তা উন্নয়নের দিক থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের মন্তব্য

ভারপ্রাপ্ত জেলা কর্মকর্তা ফেরদৌস মিয়া জানান, “কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা নিয়োগ পেয়েছেন এবং কর্মচারীরা কাজ শুরু করেছেন। আমরা আশা করি এটি সংশোধন ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।”

ফেনী-২ কারাগারের পুনঃচালু নিয়ন্ত্রক ও নিরাপত্তা সংস্থার জন্যও একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে, যেখানে বন্দীদের জীবনমান ও মানবিক শর্তাবলী উন্নত করা সম্ভব হয়েছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধাপে ধাপে আরও বন্দী স্থানান্তর করা হবে এবং কারাগারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত হবে। ফেনী-২ কারাগারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে যাতে এটি শুধু শাস্তির কেন্দ্র নয়, বরং সংশোধনেরও মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

জেল সুপার বলেন, “আমরা চাই বন্দীরা এখানে একটি নিরাপদ ও মানবিক পরিবেশে শাস্তি ভোগ করুক এবং সমাজে পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত হোক।”

ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হওয়া দেশের কারাগার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, নতুন অবকাঠামো এবং সংশোধনমূলক পরিকল্পনা দেখাচ্ছে, যে কারাগারগুলো শুধু শাস্তির কেন্দ্র নয়, বরং সংশোধনের কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেনী-২ কারাগারের সঠিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, প্রশিক্ষিত কর্মী ও চিকিৎসা সহায়তা অপরিহার্য। এটি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে দেশের অন্যান্য কারাগারেও এই মডেল অনুসরণ করা হতে পারে।

এম আর এম – ২০৩৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button