প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে তিনি কারাগার থেকে চার ঘণ্টার জন্য মুক্তি পান এবং স্ত্রী রোকেয়া রহমানের জানাজায় অংশ নিতে নিজের এলাকায় আসেন। স্ত্রীর মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই আলোচিত যুবলীগ নেতা।
স্ত্রীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন রোকেয়া রহমান (৪৮)। তাকে দ্রুত নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, দুই মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
রোকেয়া রহমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সিদ্ধিরগঞ্জসহ পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। এলাকাবাসীসহ স্থানীয় আওয়ামী পরিবার তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
প্যারোলে মুক্তির আবেদন ও অনুমোদন
স্ত্রীর মৃত্যুর পর মতিউর রহমানের পরিবার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করে। আবেদনের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ৪ ঘণ্টার জন্য প্যারোল মঞ্জুর করেন। শনিবার দুপুরে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ও পুলিশের প্রহরায় তাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে আনা হয়।
এ সময় চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এলাকাবাসী দূর থেকে প্রিয় নেতাকে দেখে আবেগাপ্লুত হন।
জানাজা ও দাফন সম্পন্ন, ফের কারাগারে মতি
বাদ জোহর আইলপাড়া মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় রোকেয়া রহমানের জানাজা। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আত্মীয়স্বজন ও সাধারণ মুসল্লি অংশ নেন। জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় উপস্থিত হয়ে মতিউর রহমান বলেন, “আমার স্ত্রী আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। আমি যখন কারাগারে, তখনই সে আমাকে একা রেখে চলে গেলো। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন।” এই কথাগুলো বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন, তখন উপস্থিত অনেকের চোখও ছলছল করে ওঠে।
দাফন শেষে পুলিশি প্রহরায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মতিউর রহমানকে পুনরায় কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট
গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মতিউর রহমান মতি ও তার ছেলে বাবুইকে গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী মামলায় তারা কারাবন্দি হন। পরে ছেলে জামিনে মুক্তি পেলেও মতিউর রহমান এখনো কারাগারে রয়েছেন।
সাবেক কাউন্সিলর ও দীর্ঘদিনের রাজনীতিক হিসেবে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বেশ পরিচিত। তাঁর গ্রেফতারের পর স্থানীয় রাজনীতিতেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক মহলের মন্তব্য
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মতিউর রহমানের পরিবারের এই শোকাবহ মুহূর্তে তারা পাশে থাকতে না পারায় কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের দাবি, মানবিক কারণে তার প্যারোল মঞ্জুর ছিল একদম সঠিক সিদ্ধান্ত।
একজন স্থানীয় নেতা বলেন, “মতি ভাই শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি এলাকাবাসীর বন্ধু ছিলেন। আজ তার চোখের পানি দেখে আমরা সবাই কেঁদেছি।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, “মতিউর রহমান মতিকে কারা কর্তৃপক্ষ বিকেল পর্যন্ত প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষে তাকে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে আইনানুযায়ী এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে।”
ভবিষ্যতে প্যারোল নীতিমালা আরও মানবিক করার দাবি
এ ঘটনার পর স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে আবারও আলোচনায় আসে বাংলাদেশের প্যারোল ব্যবস্থা। অনেকেই মনে করেন, মানবিক কারণে স্বল্প সময়ের জন্য বন্দিদের পরিবারের গুরুতর পরিস্থিতিতে পাশে থাকার সুযোগ আরও সহজ করা উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মানবিক প্যারোল বন্দিদের মানসিক স্থিতি রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখে, যা তাদের সমাজে পুনরায় একীভূত হতে সাহায্য করে।
স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়া মতিউর রহমানের সেই আবেগঘন মুহূর্ত এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মানবিক দিক থেকে এমন উদ্যোগ সমাজে সহানুভূতির বার্তা দেয় বলে মত বিশ্লেষকদের।
তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন—এই ঘটনার পর কি মতিউর রহমানের প্রতি জনমতের অবস্থান বদলাবে, নাকি এটি শুধু এক মর্মস্পর্শী মানবিক অধ্যায় হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে?
এম আর এম – ২০২৯,Signalbd.com



