আঞ্চলিক

গাজীপুরে রেস্টুরেন্টে আগুন

Advertisement

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় একতা টাওয়ার নামের একটি বাণিজ্যিক ভবনের নিচতলায় অবস্থিত টেস্টি টং নামের একটি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

আগুন লাগার সময় ও স্থান

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ কোনাবাড়ীর আমবাগ রোডে অবস্থিত একতা টাওয়ার ভবনের নিচতলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। পরে আশপাশের দোকানপাট ও বাসিন্দারা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। কিছু সময়ের মধ্যেই কোনাবাড়ী মর্ডান ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে গাজীপুর চৌরাস্তা ফায়ার স্টেশনের আরও দুটি ইউনিট যোগ দেয়।

ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তবে আগুনে দোকানের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য

কোনাবাড়ী মর্ডান ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. আশরাফুজ্জামান জানান, “আমরা খবর পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। ভবনের নিচতলায় রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবল ধোঁয়া ছিল, তাই প্রথমেই ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। এখন আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে প্রাথমিকভাবে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।”

তিনি আরও জানান, রেস্টুরেন্টটি বন্ধ থাকলেও অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

মার্কেট বন্ধ থাকায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার মার্কেটের সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দোকানগুলো বন্ধ ছিল। ফলে বড় ধরনের প্রাণহানি বা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার সময় ভবনে খুব বেশি লোকজনও উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয়রা জানান, “যদি দোকানপাট খোলা থাকত, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারত।”

স্থানীয়দের আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া

অগ্নিকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই আগুনের ভয় পেয়ে ভবনের আশপাশ থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যান। স্থানীয় ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, “আমরা ধোঁয়া দেখে দৌড়ে বের হয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আল্লাহর রহমতে বড় দুর্ঘটনা হয়নি।”

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরের যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে গেছে। তবে সুনির্দিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডের বাড়তি প্রবণতা

গাজীপুরে গত কয়েক মাসে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শিল্প এলাকা, মার্কেট এবং আবাসিক ভবনগুলোতে এসব ঘটনা বাড়তে থাকায় স্থানীয় প্রশাসন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা মনে করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগুন লাগার মূল কারণ হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ও অসাবধানতা।

তারা জানান, অধিকাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় ছোট একটি আগুনও বড় দুর্ঘটনায় রূপ নেয়। নিয়মিত পরিদর্শন ও বৈদ্যুতিক লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা না গেলে এমন দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়িক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও মার্কেটগুলিতে বাধ্যতামূলক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি কর্মীদের অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুল ইসলাম বলেন, “বৈদ্যুতিক সংযোগের নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং ফায়ার অ্যালার্ম ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হলে এমন দুর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।”

গাজীপুরে একতা টাওয়ারে টেস্টি টং রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনায় বড় কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও এটি স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এম আর এম – ২০২৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button