আঞ্চলিক

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি নারায়ণ চন্দ্র সরকারের মৃত্যু

Advertisement

ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে এক হাজতির মৃত্যু ঘটেছে। মৃতের নাম নারায়ণ চন্দ্র সরকার, বয়স ৬৬ বছর। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

কারাগারে ঘটনাস্থল ও মৃত্যুর পরিস্থিতি

নারায়ণ চন্দ্র সরকার ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি ছিলেন। পুলিশ ও কারারক্ষীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কারাগারে বন্দিদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। কারারক্ষীরা জানাচ্ছেন, সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

কারাগারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে দেশের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোর একটি। এখানে হাজতির সংখ্যা প্রায়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি থাকে। অতিরিক্ত ভিড় ও সীমিত স্বাস্থ্যসেবা হাজতিদের জন্য ঝুঁকির বিষয়।

এ ধরনের ঘটনায় আগে ও ঘটেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে কারাগারে কয়েকজন হাজতির আকস্মিক মৃত্যু সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠে। সেসব ঘটনায় অভিভাবক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল।

পরিবার ও আইনগত তথ্য

নিহতের বাবা কুঞ্জ বিহারী সরকার। নারায়ণ চন্দ্র সরকার হাজতি নম্বর ৩৩৮৬৮/২৪ ধারন করতেন। তবে মৃত্যুর সময় তার মামলার বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর খবর শুনে তারা শোকাহত। তারা আশ্বস্ত হতে চাইছেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হবে।

প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ধরনের ঘটনায় সাধারণভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা বলছে, “হাজতিদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আকস্মিক মৃত্যু সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”

তারা আরও উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।

বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারগুলোতে প্রতি বছর একাধিক হাজতির আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে বয়সদীর্ঘ বা দীর্ঘদিনের হাজতিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০–৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন।

বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও কারাগার ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “বৃদ্ধ বয়সী হাজতিদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও নজরদারি অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ঘাটতি হলে আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে।”
তারা আরও বলছেন, কারাগারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্ত করা না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা সামাজিক ও মানবাধিকারগত বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নারায়ণ চন্দ্র সরকারের মৃত্যু শুধুমাত্র এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নয়, এটি দেশের কারাগার ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন। পরিবার, মানবাধিকার সংস্থা এবং সরকার একসাথে কাজ না করলে এমন দুর্ঘটনা এভাবে পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, কেন্দ্রীয় কারাগারের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আনা হবে তা ভবিষ্যতে নজর রাখতে হবে।

এম আর এম – ২০০৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button